নিউজ

রেলে চাকরি পেতে পাঁচ বছর আগে মৃত মাকে নিখোঁজ সাজালেন ছেলে, অবশেষে পড়লেন ধরা

আপনি হয়তো অনেকবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মরদেহ নিয়ে রাজনীতি করার কথা শুনেছেন । তবে জীবিকার তাগিদে মৃতদেহ নিয়ে ‘রাজনীতি’ করাটা আপত্তিকর মনে হয়। এমনই অপরাধ করলেন ভারতের এক যুবক। তিনি তার মাকে, যিনি পাঁচ বছর আগে মারা গিয়েছিলেন, একটি নিখোঁজ কর্মমন্ডল এক্সপ্রেস যাত্রী সাজিয়ে চাকরির আকুতি জানিয়েছিলেন।

বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতেই পাটনার ওই যুবক চাকরি জোগাড়ের কাজে নেমেছিলেন। শোকাহত মানুষ সেজে জানিৃয়েছিলেন, রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করে এক পাও নড়বেন না। নিখোঁজ মাকে খুঁজে দেওয়ার আকুল আবেদন জানিয়ে যাচ্ছিল সে। তার অভিনয় এত নিখুঁত ছিল যে, ঘাবড়ে গিয়েছিলেন মন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও। তারা দুই বার ওই যুবককে ফেরত পাঠান রেল মন্ত্রণালয়ে। ওই যুবকের অভিযোগ, করমণ্ডলের দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি মায়ের খোঁজ পাচ্ছেন না। ওড়িশায় রেল, হাসপাতাল, স্থানীয় প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেও সুরাহা হয়নি। কেউ তার কথা শুনতে চাননি। মরিয়া হয়ে রেল মন্ত্রণালয়ে এসেছেন।
সব শুনে মন্ত্রকের আধিকারিকরা গার্ডেনরিচে সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ের হেডকোয়ার্টারে জরুরি বার্তা পাঠান। মন্ত্রণালয় থেকে একটি সমন পেয়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা উচ্চ তৎপরতার সাথে অনুসন্ধান শুরু করেন।

যুবকটি অফিসারদের বলেছিল যে সে এবং তার 70 বছর বয়সী মা জরুরী ট্রেনের সি-3 (স্লিপার) বগির যাত্রী ছিলেন। তিনি নিজেও দরজার কাছে ছিলেন, দুর্ঘটনার সময় তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন। জ্ঞান ফেরার পর সে তার মাকে খুঁজে পায়নি। টিকিট সম্পর্কে তিনি তাদের কোনো তথ্য দিতে পারেননি। টিকিট কোথায় কাটা হয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি। শুধু জানান, এক এজেন্ট টিকিট কেটে দিয়েছেন। বুক করা টিকিটের অনুসন্ধান অনুরোধ ফর্ম এবং অপেক্ষমাণ তালিকায় করা হয়। যেসব স্টেশনে ট্রেন থামে বা যেখানে যাত্রীদের নামানো হয় সেসব স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে ভিডিও দেখা হচ্ছে। এই তালিকায় শালিমার, সুতাগাছি, খড়গপুর, বালাসোর-এর মতো স্টেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল।

S-3 রুমে থাকা সকলকে পিএনআর তথ্য দিয়ে ডেকে মহিলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। অবশেষে, যাত্রীদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল এবং সেখানে যুবকের বৃদ্ধ মায়ের একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কেউ কিছু পায়নি। এমনকি ওই কক্ষে যারা উদ্ধারকাজ চালিয়েছিলেন তারাও বলেছেন, এমন নারীকে তারা কখনো দেখেননি।

পরে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই যুবক। তার মা 2018 সালে মারা গেছেন। তার সত্যিই কাজ দরকার, সে কারণেই সে এমন অপরাধ করেছে। তার কোন পুরস্কারের প্রয়োজন নেই, তবে এই কাজটি তার অনেক প্রয়োজন।

মানবিক কারণে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তাকে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। বালাসোরে দুর্ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের বাসিন্দা, দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তাই ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য শেষ পর্যন্ত খোঁজ চালাতে হয়েছে আমাদের।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮২ জনের মৃতদেহ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বহু মানুষ এখনও তাদের প্রিয়জনকে খুঁজছেন।

Back to top button