নিউজ

১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন কমিশনার পদে, প্রয়াত কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার

কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদারের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা পুলিশমহলে। মঙ্গলবার কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। জানা গিয়েছে, গত শনিবার থেকে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণে কলকাতার ঢাকুরিয়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কলকাতার এই প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। এদিন দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকদের বহু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি। বেলা ১২টা ৫২ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

১৯৯২ সালে কলকাতার পুলিশ কমিশনার হয়েছিলেন তুষার তালুকদার। তবে তাঁর সিপি পদে আসার নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ এক কাহিনী। ১৯৯২ সালে জীবনাবসান হয় সত্যজিৎ রায়ের। তাঁর দেহ শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে শহর কলকাতার বুকে। সেই সময় কলকাতার নগরপাল ছিলেন বি কে সাহা। সত্যজিৎ রায়ের দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় কলকাতার এক দুষ্কৃতী প্রকাশ্যেই নগরপালকে ‘সাহাবাবু’ বলে ডেকে ওঠেন। যা শুনে উপস্থিত সকলে রীতিমতো চমকে যান। বিষয়টি রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কানেও যায়। তারপরেই তড়িঘড়ি বি কে সাহাকে নগরপালের পদ থেকে সরিয়ে সেখানে নিয়ে আসা হয় তুষার তালুকদারকে।

তুষার তালুকদারের আমলেই ঘটে গিয়েছিল ২১শে জুলাইয়ের ঘটনা। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবি তুলে ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দেয় যুব কংগ্রেস। সেই সময় রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় যুব কংগ্রেস কর্মীদের জমায়েত। মোট পাঁচটি এলাকা দিয়ে মহাকরণের পথে এগোতে থাকে মিছিল। মিছিলে ছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মিছিলেই গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। মৃত্যু হয় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই ঘটনার জেরে পরবর্তী সময় ২১শে জুলাই কমিশনেও হাজিরা দিতে হয় তাঁকে। আবার ১৯৯৩ সালেই ঘটে যায় বউবাজার বিস্ফোরণও। সেই ঘটনাও তোলপাড় ফেলে দেয় গোটা রাজ্যে।

তুষার তালুকদার ছিলেন একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কলকাতা পুলিশে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে পুলিশ কমিশনার পদ থেকে অবসর গ্রহণের পরও তিনি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন।

তুষার তালুকদারের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা পুলিশমহলে। রাজ্যের পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্টের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তুষার তালুকদার ছিলেন একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর মৃত্যুতে পুলিশমহল একজন গুণীজনকে হারাল। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।”

Back to top button