‘মৃত্যুর আগে চকলেট খাওয়ার আবদার করেছিলেন বাবা’-শোকাহত সমরেশ মজুমদারের পুত্র
বহু কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। লেখনীর মাধ্যমে দুই বাংলার পাঠকের মাঝে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার এই কারিগর সোমবার মারা গেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সমরেশ মজুমদার।
শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আর মন টিকছিল না। তবে মনে ছুঁয়ে গিয়েছিল কোনো অনুভূতি ? কোনও না বলা কথা। শেষমুহূর্তে তিনি বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলেন। যেখানে সৃষ্টির মাঝেই শান্তি আছে। কিন্তু ফেরা হলো না। মেয়ের কাছে চকোলেট খাওয়ারও আবদার করেছিলেন।
এক সমুদ্র আফসোস নিয়ে মেয়ে বললেন, বাবা চকোলেট খেতে চেয়েছিলেন, নিয়েও এসেছিলাম, কিন্তু কী আর করা যাবে। ততক্ষণে সবশেষ। সে ইচ্ছে হয় তো রয়ে গেল, দিনের আলোর গভীরে, রাতের তারায়। গত প্রায় এক যুগ ধরে ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) ভুগছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক। হাসপাতাল সূত্র বলছে, গত ২৫ এপ্রিল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার জয়ী এই লেখককে।
এরপর শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর ‘ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা’ও (স্লিপ অ্যাপমিয়া) বাড়তে থাকে তার। সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় চিকিৎসকরা ভেন্টিলেশনে নেওয়ার পরও সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন এই সাহিত্যিক।
১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন সমরেশ মজুমদার। প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজের বাংলা (সাম্মানিক) স্নাতক বিভাগে। এরপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
লেখার গতি আর গল্প বলার ভঙ্গির কারণে দশকের পর দশক ধরে দুই বাংলার পাঠককে মুগ্ধ করে রেখেছেন সমরেশ মজুমদার। এই সাহিত্যিকের প্রথম উপন্যাস দৌড় প্রকাশিত হয়েছিল দেশ পত্রিকায় ১৯৭৬ সালে। এরপর একে একে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ-এর মতো উপন্যাস পাঠককে উপহার দিয়েছেন তিনি।
তবে সমরেশের সেরা সৃষ্টি হিসেবে মনে করা হয় ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ ট্রিলজিকে। এই ট্রিলজি তাকে বাংলা সাহিত্যের জগতে বিশেষ খ্যাতি এনে দিয়েছে।
সমরেশের লেখনীর গণ্ডি শুধু গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে আটকে থাকেনি। ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দা কাহিনি, কিশোর উপন্যাস রচনায় সমরেশ ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার ঝুলিতে রয়েছে অনেক পুরস্কারও। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইওয়াইএমএস পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।