অফবিট

বিশেষ: কমছে সুপেয় জলের পরিমান, শুকিয়ে গেছে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মিঠা জলের উৎস

পৃথিবীর মিঠা জলের প্রায় ৮৭ শতাংশই সঞ্চয় করে রাখে প্রাকৃতিক হ্রদ এবং জলাধারগুলো। তবে গত তিন দশকে বিশ্বের বড় দুই হাজার হ্রদ এবং জলাধারের মধ্যে ৫৬ ভাগ প্রায় শুকিয়ে গেছে। প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, কৃষিখাতে জল নির্ভরতা ও অপরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা রিপোর্টের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৫৬ শতাংশ বড় হ্রদ এবং জলাধার শুকিয়ে সঙ্কুচিত হয়েছে। বিশ্বের দুই হাজার জলাশয় এবং হ্রদ পর্যবেক্ষণ করে এই গবেষণা রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যবর্তী কাস্পিয়ান সাগর থেকে দক্ষিণ আমেরিকার লেক টিটিকাকা পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিঠা জলের উৎসগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রায় তিন দশক ধরে প্রতি বছর প্রায় ২২ গিগাটন হারে জল হারিয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম জলাধার লেক মিয়াদের জলের প্রায় ১৭ গুণ।

ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার সারফেস হাইড্রোলজিস্ট ফ্যাংফ্যাং ইয়াও সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ৫৬ শতাংশ প্রাকৃতিক হ্রদ শুকিয়ে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু উষ্ণায়ন এবং মানুষের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অন্যতম। এই দু’টির সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা সংকটকে আরো তীব্রতর করেছে।

জলবায়ু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের শুষ্ক অঞ্চলগুলো আরো শুষ্ক হয়ে উঠবে এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলো আরো আর্দ্র হয়ে উঠবে।

ইয়াও বলেছেন, ‘এটি আর উপেক্ষা করা উচিত হবে না।’

সম্প্রতি স্পেন জানিয়েছে, কাতালোনিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলাধারগুলো কয়েক মাসের খরার পরে প্রায় মাত্র ২৬ শতাংশজুড়ে জলেতে পূর্ণ হয়েছে। যেখানে ২০২২ সালেও খরার পরে জল ছিল ৫৮ শতাংশ।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ বিপর্যয়কর পরিণতি এড়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট হারে ছাড়িয়ে যাওয়া রোধ করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রায় ১.৯ ফারেনহাইট হারে উষ্ণ হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম মাপকাঠি গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি। এর ফলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বদলে গেছে। আগে যেখানে যেমন বৃষ্টি হতো, এখন তা হচ্ছে না। এর ফলে স্বাভাবিক হ্রদগুলোর পলি আগে যেভাবে জমতো, এখন তা বদলে গেছে। হ্রদ এবং জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার এটাও একটি কারণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুকিয়ে যাওয়া হ্রদ অববাহিকায় বসবাস করা প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই পরিস্থিতিতে সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছে।

Back to top button