অফবিট

একাধিক সম্পর্ক ও নগ্ন দৃশ্যের শুটিং, বলিউড অভিনেত্রীর জীবনই যেন সিনেমা

নব্বইয়ের দশকে বলিউডের জনপ্রিয় ও ব্যস্ত অভিনেত্রী আয়েশা জুলকা। শুধু হিন্দি সিনেমা নয়, তিনি বাংলা, ওড়িয়া,কন্নড় এবং তেলুগু ভাষার ছবিতে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সলমন খান, আমির খান, গোবিন্দ, অক্ষয় কুমার, মিঠুন চক্রবর্তী, নানা পটেকরের মতো তারকাদের সঙ্গে একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।
তবে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তাকে বার বার এমন ভাবে ঠকিয়েছিলেন যে, বলিপাড়া থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিরতি নিতে বাধ্য হন আয়েশা।

প্রকাশ মেহরার প্রযোজনায় ১৯৯৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘দালাল’ সিনেমা। এই ছবিটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পার্থ ঘোষ। মিঠুন চক্রবর্তী, রাজ বব্বরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন আয়েশা।

প্রকাশ জানিয়েছিলেন যে, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে নগ্ন অথবা অর্ধনগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে আয়েশাকে। কিন্তু অভিনেত্রী এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। তার মনে হত, দর্শক যদি তাকে এমন দৃশ্যে কাজ করতে দেখেন তা হলে তাকে ‘বি গ্রেড’ নায়িকাদের মতো ভাবতে শুরু করবেন। তিনি এমন দৃশ্যে অভিনয় করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

আয়েশার শর্ত মেনে নেন ছবি নির্মাতারা।কোনও রকম খোলামেলা দৃশ্য ছাড়াই ছবির শুটিং চালিয়ে যেতে থাকেন তারা। কিন্তু শুটিং চলাকালীন আয়েশা ফ্লোরে কানাঘুষো শুনতে পান যে, নায়িকার এক ‘বডি ডবল’কে দিয়ে নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করানো হচ্ছে। এই খবর শোনার পর সরাসরি প্রযোজক এবং পরিচালকের কাছে ছুটে যান তিনি।

আয়েশাকে আড়ালে রেখে কোনও শুটিং করানো হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন ছবি নির্মাতাদের। ছবি নির্মাতা-সহ প্রকাশের স্ত্রী অভিনেত্রীকে আশ্বাস দেন যে, আলাদা ভাবে কোনও দৃশ্য শুট করা হচ্ছে না।

কিন্তু ছবি মুক্তি পাওয়ার পর অবাক হয়ে যান আয়েশা। তিনি দেখেন যে, ছবিতে একটি নগ্ন দৃশ্যে তিনি অভিনয় করছেন। আসলে অভিনয় করেছেন তার ‘বডি ডাবল’। তবে, দর্শকের পক্ষে তা বোঝার সাধ্যি নেই। এই নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানান আয়েশা। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

বলিউড পাড়ায় প্রকাশের প্রভাব থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাইছিলেন না। এর পর আয়েশা প্রকাশের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আয়েশাকে তিনি জানান যে, প্রকাশ মাঝেমধ্যেই দর্শকের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেওয়ার জন্য এমন পথ নেন।

ছবি থেকে দৃশ্যটি সরিয়ে ফেলার জন্য প্রকাশ এবং পার্থকে অনুরোধ করেছিলেন আয়েশা। কিন্তু প্রকাশ জানান যে, তা সম্ভব নয়। সিনেমাটি বাজারে বিক্রি করার জন্য তাকে এই দৃশ্যটি রাখতেই হবে। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুখ খুলতে থাকেন আয়েশা।

প্রকাশ এবং পার্থ মিলে কী ভাবে আয়েশাকে ঠকিয়েছেন, গণমাধ্যমের কাছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন এই অভিনেত্রী। পার্থ এর জন্য চিঠি লিখে আয়েশার কাছে ক্ষমা চাইলেও প্রকাশ তাকে হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগও করেন আয়েশা।

ছবির প্রস্তাব গ্রহণ করার সময় যে কাগজে আয়েশা স্বাক্ষর করেছিলেন, তাতে প্রথম শর্ত হিসাবে লেখা ছিল যে, ছবির প্রয়োজনে ছবি নির্মাতারা যা যা করতে বলবেন, অভিনেত্রী তা করতে বাধ্য। স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অভিনেত্রীকে পাঠানোর পর প্রকাশ বলেন, তুমি এ বার থেমে যাও। না হলে পারিশ্রমিক হিসাবে যে আরও এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা আর পাবে না।

প্রকাশের হুমকিতে ভয় পেয়ে যান আয়েশা। হাজার অনুরোধের পরেও ছবি থেকে দৃশ্যটি সরিয়ে নেননি নির্মাতারা। অভিনেত্রীর কেরিয়ারের গ্রাফও এর পর নীচের দিকে নামতে থাকে। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘আমি এ বার বলিপাড়া থেকে বিরতি নেব। এত মানসিক চাপ আর সহ্য করতে পারছি না।’

Back to top button