অফবিট

ভয় নেই! বিষহীন দাঁড়াশ সাপ কৃষির উপকারী প্রাণী, মানুষ ভয় পেয়েই তাদের মেরে ফেলে

যদি প্রশ্ন করা হয় – সব সাপ কি বিষাক্ত? অনেকেই হয়তো বলবেন (যারা সাপ নিয়ে বেশি ভীতু) ‘হ্যা’। আসতে তাদের উত্তরটি সম্পূর্ণভাবে ভুল। পৃথিবীতে প্রায় ৩ হাজার প্রজাতির সাপ বিজ্ঞানীরা সনাক্ত করেছেন। তার মাঝে মাত্র ১৫ শতাংশ বিষাক্ত। আর আমাদের দেশে প্রায় ৯০ প্রজাতির সাপের বিচরণ রেকর্ড করা হয়েছে। এর মাঝে বিষাক্ত সাপ মাত্র ৫ শতাংশ।

আক্ষেপের কথা হলো- শুধুমাত্র ভুল ধারণা আর কুসংস্কারের কারণেই প্রাণ হারাচ্ছে কৃষির উপকারী দাঁড়াশ সাপ। দাঁড়াশ বিষাক্ত সাপ নয় মোটেই। কিছু মানুষ এটিকে বিষাক্ত সাপ মনে করে একে দেখা মাত্র প্রাণে হত্যা করে থাকেন।

আর এর ফলেই এ নির্বিষ অর্থাৎ বিষমুক্ত দাঁড়াশ সাপগুলো জীবন বর্তমানে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। এই সাপকে আবার দারাজ বা ধারাজ নামেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

প্রধান খাবার ইঁদুর বলেই এ সাপটির ইংরেজি নামেও রয়েছে ইঁদুরের ইংরেজি নামের পরশ। এর ইংরেজি নাম Indian Rat Snake বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa। এরা দৈর্ঘ্যে ২০০ সেন্টিমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ফসলের ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে এরা কৃষক এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্যের অভাবনীয় উপকার সাধন করে চলেছে। এই উপকারী সরীসৃপ প্রাণীটির প্রতি আরো সচেনতা বাড়ানোর কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজনের মাঝে একটি কুসংস্কার রয়েছে যে, দাঁড়াশ সাপ মানেই বিষাক্ত সাপ; একে দেখলে মারবেই এরকম। এটি সাইজেও বড় এবং দেখতে অনেকটা বিষাক্ত কোবরার মতই; এ সবকিছু দেখেই লোকজন মনে করে রেখেছে যে ‘দারাজ’ও খুবই বিষাক্ত সাপ এবং তাকে মারা উচিত। তবে এ সাপটি সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত।’

বিষের ভুল ধারণা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘অনেকের এটাও ধারণা আছে যে তার শুধু মুখে নয়; লেজেও নাকি বিষ আছে। মুখের পরিবর্তে লেজ দিয়ে আঘাত করলে ওই আঘাতে স্থানটি ধীরে ধীরে পচে যাবে এ রকম কুসংস্কার আছে। আসলে এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। এই কুসংস্কারের কারণেই এ প্রজাতির দাসাপগুলো প্রাণ হারাচ্ছে।’

উপকারের কথা উল্লেখ করে এ গবেষক বলেন, ‘এদের অন্যতম প্রধান ও পছন্দের খাবার হলো ইঁদুর। তাই এরা ফসল জমির আশপাশে থাকে এবং এই ফসলের ক্ষতিকারণ ইঁদুর খেয়ে ফসলের উপকার করে। আমাদের গ্রামগঞ্জের বাড়ির আশেপাশে যতটা থাকে ফসলি জমির আশপাশে তার চেয়ে অনেক বেশি থাকে। ইঁদুর কন্ট্রলের জন্য এই সাপটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে থাকে। আমরা না জেনে এই উপকারী প্রাণীটাকে হত্যা করে থাকি।’

বিষের ভুল ধারণা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘অনেকের এটাও ধারণা আছে যে তার শুধু মুখে নয়; লেজেও নাকি বিষ আছে। মুখের পরিবর্তে লেজ দিয়ে আঘাত করলে ওই আঘাতে স্থানটি ধীরে ধীরে পচে যাবে এ রকম কুসংস্কার আছে। আসলে এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। এই কুসংস্কারের কারণেই এ প্রজাতির দাসাপগুলো প্রাণ হারাচ্ছে।’

‘এ সাপটি সারাদেশেই পাওয়া যায়। তাই এখনো থ্রেড ক্যাটাগরিতে আসেনি। তবে আগে যে রকম পাওয়া যেত তা আস্তে আস্তে কমে আসছে। এর কারণ হচ্ছে তার আবাসস্থল ধ্বংস এবং প্রজনন সমস্যা। এছাড়াও দ্বিতীয় কারণ হলো, লোকজনের হাতে প্রচুর পরিমাণ মারা পড়ে এই সাপটি।’এই দাঁড়াশ সাপটি যেমন নির্বিষ তেমন একেবারে নিরিহ প্রজাতির প্রাণী। হাত দিয়ে ধরলেও বেশি নড়াচড়া করে বা রেগে উঠে না। তবে কোনো কারণে এই সাপ রেগে গিয়ে কাউকে যদি কামড়ও দেয় তাতেও কিছুই হবে না বলে জানান প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক।

Back to top button