বিশেষ: সময়ের কাজ সময়ে করেনা কারা?-জেনেনিন সময়ের কাজ সময়ে করার সেরা কিছু উপায় (১ম পর্ব )

ঢিলেমি, কাজ ফেলে রাখা বা দীর্ঘসূত্রিতা শুধু একটি বদ অভ্যাসই নয়, এটি একটি অভিশাপ।
আপনি যদি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারেন, কাজ ফেলে রেখে রেখে একদম শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে আসেন; এবং সামান্য সময়ে অনেক কাজ করতে বাধ্য হন – তবে আপনার মাঝে ঢিলেমির সমস্যা আছে।
তবে এই অভিশাপ একমাত্র আপনার ঘাড়ে নয়, পৃথিবীর ২০% মানুষই এই অভিশাপের শিকার।
হাতে জরুরী কাজ থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের মানুষেরা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।একদম শেষ সময়ে গিয়ে এদের টনক নড়ে – আর তখন নাকেমুখে কোনওরকমে কাজটি তারা শেষ করে। অনেক সময়ে কাজ শেষও করতে পারে না।
এর আগে “কাজ ফেলে রাখা বা ঢিলেমির ৮টি ভয়াবহ কুফল” আর্টিকেলে আমরা দেখিয়েছিলাম কিভাবে এই অভ্যাস আপনার ক্যারিয়ার এমনকি জীবনকেও ধ্বংস করে দিতে পারে।
আজকের এই লেখায় আমরা নির্দিষ্ট করে আপনাকে জানাবো যে, কারা আসলে এই ঢিলেমি বেশি করে, এবং এর কারণ কি? – যাতে আপনি বুঝতে পারেন আপনি এদের দলে পড়েন কি-না।এবং সেই সাথে আপনি জানতে পারবেন, এই আলাদা আলাদা ঢিলেমি করা দলের মানুষের সমস্যাগুলোর আলাদা আলাদা সমাধান।
কাজ ফেলে রাখা বা ঢিলেমি আসলে কি?
“The Procrastination Equation: How to Stop Putting Things Off and Start Getting Stuff Done,” বইয়ের লেখক পিয়ার্স স্টিল লিখেছেন, “দেরি করলে ক্ষতি হয়ে যাবে, এটা জানার পরও ইচ্ছে করে সময়ের কাজ সময়ে না করার নামই ঢিলেমি বা দীর্ঘসূত্রিতা”।
অন্যকথায়, ঢিলেমি হলো জরুরী কিন্তু কষ্টকর কাজ বাদ দিয়ে যতক্ষণ পারা যায় সহজ ও বেশি উপভোগ্য কাজ করা। এর ফলে সত্যিকার প্রয়োজনীয় কাজ একদম শেষ সময়ে গিয়ে ঠেকে। এর খুব কমন একটি উদাহরণ হতে পারে পুরো সেমিস্টার মজা ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কাজ করে একদম পরীক্ষার আগে আগে নাকে মুখে পুরো সিলেবাস কাভার করার চেষ্টা করা।
ঢিলেমি বন্ধ করা / সময়ের কাজ সময়ে করা এত কষ্টকর কেন?
আমরা সবাই কমবেশি ঢিলেমির কুফলগুলো জানি; ঢিলেমি করার খেসারতও প্রায় সবাইকেই জীবনে দিতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও শত চেষ্টা আর ইচ্ছার পরও এটা কেন বন্ধ করা যায় না?
অনেক সময়েই হয়তো আপনি ভেবেছেন, এর পরের সেমিস্টারে আমি ঠিকমত পড়বো, বা এর পরের প্রজেক্টে কাজ ফেলে রেখে সময় নষ্ট করে একদম ডেডলাইনের শেষে নিয়ে যাবো না। কিন্তু সময় আসলে দেখা যায় আপনি ঠিকই অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করছেন। এতে নিজের ওপর আপনার দারুন রাগ হয়, মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এই অভিশাপ থেকে আপনি মুক্ত হতে পারেন না। দুই একদিন বা সপ্তাহ খানেক চেষ্টা করার পর আবার ‘ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন’ হয়ে যায়।
আপনাকে একটা কথা বলে রাখি, এটা আসলে পুরোপুরি আপনার দোষ নয়। মানুষের জন্মগত স্বভাবই আসলে সহজ জিনিসটি বেছে নেয়া। আমাদের মস্তিষ্কই আমাদের কঠিন কাজ বাদ দিয়ে মজার ও সহজ কাজটি করতে উত্সাহিত করে। আর এই কারণে এ্যাসাইনমেন্ট বা রিসার্চের কাজ করার চেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ইউটিউবে বিড়াল-কুকুরের ফানি ভিডিও দেখতে, বিখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটিদের মূল্যহীন কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খেতে আমাদের ভালো লাগে।
আবার দিনের পর দিন এই কাজ করতে করতে সেটা আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়। আর একবার অভ্যাস হয়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়াটা শুধু ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করে না, তার জন্য কিছু বিষয় জানা ও কৌশল অবলম্বনের দরকার হয়।
ঢিলেমির সাথে বেশ কিছু মনোদৈহিক বিষয় জড়িত, যা সব সময়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমেরিকার ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির অধ্যাপক ও গবেষক ড.রয় ব্যাউমিইস্টার আত্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বহুদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন। তাঁর মতে, মানুষ নিজেকে কতটা বা কতক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে – তার একটা সীমা আছে। কাজ করার এক পর্যায়ে আমাদের পেশী যেমন ক্লান্ত হয়, আত্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও তেমনি ক্লান্ত হয়। আপনি যে ব্যাপারেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান না কেন, মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশকে তার পেছনে খাটতে হয়। মস্তিষ্কেরও একটা এনার্জি লিমিট আছে – এই লিমিট বা সীমা পার হয়ে গেলে সে-ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে যখন একেবারেই কাজ করতে পারে না, তখন ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুমের আগেও একটু একটু করে যখন তার এনার্জি খরচ হতে থাকে – তখন তার ফাংশানগুলো পুর্ণ ক্ষমতায় কাজ করতে পারে না।
যাই হোক, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে করতে একটা সময়ে হয়তো আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়লেন – আর তখনই মস্তিষ্কের আদিম স্বভাব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে – অর্থাত্ সে আপনাকে আরাম ও আনন্দের দিকে নিয়ে যায়। মস্তিষ্কের গঠনই এমন; সে তার শরীরকে সব সময়ে নিরাপদে ও সুখে রাখতে চায়। বিছানা দেখলেই আমাদের শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হয় – যদি তা আমরা ছবিতেও দেখি – তবুও। কিন্তু যুদ্ধ দেখলে খুব কমই আমাদের তার মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইচ্ছে হয়। এটা মস্তিষ্কের জন্মগত নিরাপদ থাকতে চাওয়ার প্রক্রিয়া বা Survival instinct.
অবচেতনে আমরা জানি যে পড়া বা কাজ করার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখা বা ফেসবুকে চ্যাট করা অনেক কম কষ্টের কাজ। আমাদের অবচেতন মন আসলে আমাদের কষ্ট থেকে দূরে রাখতে চায়, আর তাই সে ঢিলেমিকে কাজ এড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। সে আমাদের বোঝায় যে কাজতো পরেও করা যাবে, হাতে তো সময় আছেই – এখন একটু সময়ের জন্য উপভোগ করলে তেমন কোনও ক্ষতি নেই।
একারণেই অনেক সময়ে পড়তে বসে আমাদের মনে হয়, খেলার স্কোরটা চট করে একটু দেখে আসি, একটা গান শুনে পড়তে বসি, আর একটা ফান ভিডিও দেখে মনটাকে চাঙ্গা করে নিই।
কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায়, খেলার স্কোর দেখতে গিয়ে পুরো খেলাটাই দেখা হয়ে যায়, একটা গান থেকে পাঁচটা গান হয়ে যায়, একটা ৫ মিনিটের ভিডিও দেখতে গিয়ে মোটামুটি দশ-বারোটি ভিডিও দেখা হয়ে যায়। তারপরও যখন টনক নড়ে – তখন মনে হয়, আর একটু সময় মজা করলে ক্ষতি কি? সময় তো আছেই। আর এভাবেই আপনার নিজের মস্তিষ্ক আপনার সাথে প্রতারণা করতে করতে আপনাকে একদম খাদের কিনারে এনে ফেলে।
কাজেই বুঝতে পারছেন, ঢিলেমি বা দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আসলে মানুষের একদম আদিম বৈশিষ্টের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করা। এটি মানুষের একটি জন্মগত দুর্বলতা, আবার শক্তিও বটে। যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রবণতা কারণে মানুষ যুদ্ধ জয় করে, প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিঁকে থাকে, সেই একই প্রবণতার সাথে যুদ্ধ করে না পেরে আমরা জীবন যুদ্ধে হেরে যাই।
কিন্তু এই হেরে যাওয়াটা আপনার নিয়তি নয়। সঠিক উপায় অবলম্বন করতে পারলে আপনি এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে জীবন যুদ্ধেও বিজয়ী হতে পারবেন।
চলুন ধাপে ধাপে আমরা ঢিলেমির শিকার কারা বেশি হয় ও এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশল জেনে নিই:
৫ ধরনের ঢিলেমি ও এর শিকার হওয়া মানুষ:
এটা জানা আপনার এজন্য দরকার, যাতে করে আপনি বুঝতে পারেন আসলে আপনার ঢিলেমি স্বভাবের উত্স কি? এবং আপনার জন্য কোন ব্যবস্থাটি সবচেয়ে ভালো হবে।
বিভিন্ন ধরনের মানুষ বিভিন্ন কারণে ঢিলেমি করে। মনোবিজ্ঞানীরা মূল ৫টি ক্যাটাগরিতে এদের ভাগ করেছেন। আপনার মাঝে যদি ঢিলেমির স্বভাব থেকে থাকে, তবে দেখে নিন আপনি কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন।
ক্যাটাগরি গুলো হলো, পারফেকশনিস্ট, উটপাখি, আত্মবিধ্বংসী, অতি সাহসী, প্রতারক।
০১. পারফেকশনিস্ট
এরা সবকিছু একদম পারফেক্ট ভাবে করতে চায়। কাজের কোথাও কোনও খুঁত থাকা চলবে না। কিন্তু এই স্বভাবের কারণে তারা কাজে ভুল হওয়া বা কাজে খুঁত থাকাকে অতিরিক্ত ভয় পায়। ফলে অনেক সময়েই তারা সময় মতো কোনও কাজ করতে ব্যর্থ হয়, কারণ তাদের চোখে কোনও কাজের আয়জন ও সময় একদম মোক্ষম না হলে তারা কোনও কাজ শুরুই করতে পারে না।
কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই সেই মোক্ষম আয়োজন আর সময় আসে না – তাই কাজও করা হয়ে ওঠে না। ওদিকে সময়ের মতো করে সময় চলে যেতে থাকে। কাজের আয়োজন করা আর ভাবনা ভাবতে ভাবতেই আসল কাজের সময় চলে যেতে থাকে। কিন্তু তারা সেই পারফেকশনের আবর্তেই ঘুরপাক খেতে খেতে সময় নষ্ট করতে থাকে।
উদাহরন হিসেবে একজন বিসিএস ক্যান্ডিডেটের কথা ধরা যাক। তার স্বপ্ন সে সরকারী বড় পদে কাজ করবে। তার মেধা ও যোগ্যতার কোনও অভাবও নেই। কিন্তু প্রতিবারই তার মনে হয়, “এবার দিলে হবে না – আমি এখনও যথেষ্ঠ যোগ্য হয়ে উঠতে পারিনি। পরের বার চেষ্টা করে দেখবো”। এমন করতে করতে হয়তো দেখা যায়, এই পারফেকশনিস্ট এক বা একাধিক পরীক্ষাই মিস করে ফেলল। এই স্বভাবের কারণে অনেকেই অনেক সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না।
০২. উটপাখি
উটপাখির একটা স্বভাব হলো, কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা দিলে সে বালির মাঝে মাথা ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা তারা করে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। অবস্থা যত খারাপই হোক না কেন, তারা বালির মাঝে মুখ গুঁজে দিয়ে ভাবে সবকিছু আসলে ঠিকই আছে, কিছুই হয়নি।
এইধরনের স্বভাব একদল ঢিলেমি করা মানুষের মাঝেও দেখা যায়। এই ধরনের মানুষ একটি স্বপ্নময় ঘোরের মাঝে থাকতে পছন্দ করে। আশপাশে যা-ই ঘটুকনা কেন, এরা মনে করে সব ঠিকঠাক আছে। এর ফলে তারা সত্যিকার কাজ করা থেকে বিরত থাকে এবং বাস্তব অবস্থায় চলমান চাপ ও নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকে।
এই স্বপ্ন বা ঘোর এই ধরনের মানুষকে একটি মিথ্যা সাফল্য ও অর্জনের অনুভূতি দেয়। তারা বর্তমানে না বেঁচে ভবিষ্যতের সুখ কল্পনায় বাঁচে – এবং সেখানে নিজেকে একজন বিরাট সফল মানুষ হিসেবে দেখে। কিন্তু সত্যিকারে তা অর্জন করতে যেসব কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় – তা সযত্নে এড়িয়ে যায়। এসব মানুষের বিশ্বাস থাকে, পরিস্থিতি নিজে নিজেই তার অনুকূলে চলে আসবে। তাই বাস্তবতার মুখোমুখী হওয়ার বদলে দিবাস্বপ্ন দেখতে দেখতেই তারা কাজের সময় নষ্ট করে ফেলে। ওদিকে সত্যিকারের কিছুই তারা জীবনে অর্জন করতে পারে না।
০৩. আত্ম বিধ্বংসী
আগের বর্ণনা করা দুই প্রকার মানুষের কিছু কিছু বৈশিষ্ট এদের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। উটপাখিরা ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নে বিভোর থাকে, এবং কোনও কাজ না করেই মনে করে যে তাদের ভবিষ্যত্ অনেক উজ্জ্বল। আর আত্ম বিধ্বংসীরা মনে করে যে, কিছু না করে বসে থাকলে, লাভ না হলেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই মিথ্যা নিরাপত্তার আশায় তারা কিছু না করে বসে থাকে।
তাদের মাঝে আরও একটি বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়, যেটা খানিকটা পারফেকশনিস্টদের মতো। এরাও একদম শেষ সময় পর্যন্ত কাজ ফেলে রাখে, তবে সেটা ভুল করার ভয়ে নয়, বেশি গা-ছেড়ে দিয়ে থাকার কারণে। কিন্তু একদম শেষে গিয়ে তাদের প্যানিকের মত হয়, এবং তারা নাকে মুখে কাজ করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে একেবারেই কাজ না করলে ক্ষতি হতে পারে – এই ভয় তাদের মাঝে কাজ করে। তাই একদম শেষ মূহুর্তে গিয়ে তারা পারফেকশনিস্টদের মতো মোক্ষম সময় ও পরিবেশের জন্য বসে থাকতে পারে না – কাজ শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে।
০৪. অতি সাহসী
অতি সাহসীদের অতি আত্মবিশ্বাসীও বলা যায়। এরা একদম শেষ পর্যন্ত কাজ ফেলে রাখে কারণ এদের মনে হয় এই কাজের পেছনে এতটা সময় দেয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, অল্প সময়েই কাজটি সে করতে পারবে, তাই বাকি সময়টা বিনোদন ও অপ্রয়োজনীয় কাজ করে কাটিয়ে দেয়।
এরা সাধারনত বেশ প্রতিভাধর মানুষ হয়, এবং নিজের ক্ষেত্রে তাদের বেশ দক্ষতা থাকে।কিন্তু এটা তাদের মাঝে একটি অতিরিক্ত সাহসী সত্ত্বার জন্ম দেয় – যা নিজের অজান্তেই তাদের উন্নতির মাত্রাকে অনেক কম করে ফেলে। বহু প্রতিভাবান মানুষ তাদের এই স্বভাবের কারণে যোগ্যতার চেয়ে অনেক কম সাফল্য ও অর্জন নিয়ে জীবন কাটান।
এই ধরনের মানুষ আরও বিশ্বাস করে যে, ডেডলাইনের শেষ প্রান্তে গিয়ে কাজ করলে তাদের কাজ সবচেয়ে ভালো হবে। তাই তারা শিডিউল করে পুরো সময়টি কাজে লাগিয়ে কাজ করার বদলে সময়সীমাকে একদম শেষ পর্যায়ে নিয়ে যায়।
এটি অবশ্য তারা সচেতন ভাবে করে না, কিন্তু মনের মধ্যে তাদের এই অনুভূতিই কাজ করে – “Performing Best Under Pressure” – ইংরেজীতে অতি প্রচলিত এই কথাটি এই ধরনের মানুষের কারণেই প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের মানুষ এই কথা মাথায় রেখে নিজের সময় নষ্ট করাকে বৈধতা দেয়। তাদের মাথায় কাজ করে যে তারা অল্প সময়েই কাজটি শেষ করে ফেলতে পারবে – কাজেই এত চিন্তার কিছু নেই। নিজের ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা ও সাহসের কথা চিন্তা করে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটি মোটেও এরকম নয়। এরকম চলতে চলতে কখন যে তার কাজের মান ও দক্ষতা তলানিতে গিয়ে ঠেকে – সেটা সে নিজেও বুঝতে পারে না।
০৫. প্রতারক
এমন মানুষ হয়তো আপনারও চোখে পড়েছে, যে একদমই নিজের মর্জিমত চলে। যখন যা ইচ্ছা হয় – সেটাই করে। বেশিরভাগ সময়েই সে কারও কথা শোনে না। ‘আমার যখন সময় হবে, তখন আমি করবো’ – এই কথাটা তার মুখে প্রায়ই শোনা যায়। ভাবভঙ্গী দেখে মনে হয়, দারুন স্বাধীনচেতা একজন মানুষ।
তবে সম্ভাবনা আছে, মানুষটি আসলে মারাত্মক ঢিলেমি পূর্ণ স্বভাবের। যখন যেটা মন চায়, তখন সে তা-ই করে (আসলে করতে বাধ্য হয়), কারণ নিজের ইচ্ছার ওপর তার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
কোন কাজটি এই মূহুর্তে আসলেই করা প্রয়োজন, তা সে ভেবেও দেখে না, অথবা দেখতে চায় না।
মাঝে মাঝে এদের গোঁয়ার ধরনের মানুষ বলে মনে হয়। যেন মর্জির বাইরে এদের দিয়ে কিছুই করানো সম্ভব নয়। নিজেকে তারা এভাবেই জাহির করে, কিন্তু তারা অনেক সময়ে নিজেরাই টের পায় না যে তারা আসলে নিজের আবেগ আর ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দুর্বল প্রকৃতির মানুষ। এভাবে তারা নিজের পাশাপাশি আশপাশের মানুষদের সাথেও প্রতারণা করে।
হয়তো মনের গভীরে তারা তাদের দুর্বলতার কথা জানে, কিন্তু নিজের ইগোর কারণে তা নিজেকে ও অন্যদের বুঝতে দেয় না। জরুরী কাজ ফেলে রেখে অদরকারী কাজ করলেও এরা সব সময়ে একটা ব্যস্ততার ভাব ধরে দেখাতে চায় যে তারা অনেক কাজ করছে – কিন্তু আদতে তা সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়। এরা অনেক সময়ে নিজেরাও বুঝতে পারেনা, তারা আসলে ঢিলেমি করছে। নিজে যেটা করছে, সেটাই তাদের কাছে জরুরী কাজ বলে মনে হয় – আর এগুলো করতে গিয়ে আসল কাজের সময় চলে যায়।