পুরভোটেও মমতা ঝড়, সাফ বিজেপি
তৃণমূল একাই ১০০। মমতা ঝড়ে ভাঙল বঙ্গ বিজেপির তাবড় নেতাদের দুর্গ। একটা পুরসভারও দখল নিতে পারল না গেরুয়া শিবির। এমনকী, দিনভর তৃণমূলের গালমন্দ করেন যে বিজেপি নেতারা, তাঁরা নিজেদের ওয়ার্ডেও পদ্ম ফোটাতে পারলেন না। ঘাসফুল ফুটল উত্তরের দার্জিলিং থেকে দক্ষিণের কাঁথিতে। প্রায় ৯৪ শতাংশ পুরসভাই তৃণমূলের দখলে। বুধবার প্রকাশিত রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ফল বলছে, তৃণমূলের হাতে এসেছে ১০২টি পুরসভা। ভোট হয়েছিল ২ হাজার ১৭১টি ওয়ার্ডে। তাতে তৃণমূল একাই পেয়েছে ১ হাজার ৮৭০টি ওয়ার্ড। দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদের ওয়ার্ড ভিত্তিক জয় তার ধারেকাছেও নেই। আর পুরভোটে তৃণমূলের এই বিপুল সাফল্যকে সঙ্গে নিয়েই মোদি বিরোধী লড়াইয়ে এদিন বারাণসীতে পা রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতা জানান বাংলার মানুষকে। বলেন, ‘বারাণসী যাওয়ার আগে বাংলার মানুষ আমাকে আরও বেশি করে অনুপ্রাণিত করেছেন। আশীর্বাদ দিয়েছেন।’
কলকাতা পুরভোট থেকে শুরু হয়েছিল জয়ের যাত্রা। বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল, শিলিগুড়ি হয়ে সেই ধারা অব্যাহত রাখল তৃণমূল। ১০২টি পুরসভায় এককভাবে তৃণমূলকে জিতিয়ে মমতার পাশেই থাকল বাংলার মানুষ। ৩০টিরও বেশি সংখ্যক পুরসভা বিরোধী শূন্য। যেখানে সব ওয়ার্ডে তৃণমূল জয়ী। এগরা, বেলডাঙা, চাঁপদানি ও ঝালদা পুরসভা ত্রিশঙ্কু। তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই পুরসভাগুলিও তৃণমূলের হাতে চলে আসবে। এছাড়া তাহেরপুর পুরসভায় বোর্ড গঠন করতে চলেছে বামেরা। আর দার্জিলিংয়ে বোর্ড গঠন করবে অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি।
তবে পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল—তৃণমূলের জয় দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া করেছে। দিনহাটা পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই দখল করেছে জোড়াফুল ব্রিগেড। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের দুর্গে ভাঙন শুরু তখন থেকেই। আর এবার দার্জিলিংয়ে দু’টি ওয়ার্ড জয়। উত্তরবঙ্গের সব পুরসভাতেই তৃণমূলের ফল ভালো হয়েছে। ফলে সবুজ ঝড়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে গেরুয়া রং যে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে, এই ভোটের ফলই তার প্রমাণ।
চার দশক ধরে কাঁথি পুরসভায় নিয়ন্ত্রণ ছিল অধিকারী পরিবারের হাতে। এবার অধিকারী-মুক্ত হল কাঁথি। মমতার উপর ভরসা রেখে এলাকার মানুষ তৃণমূলের হাতে তুলে দিল এই পুরসভাকে। গুরুত্বপূর্ণ হল, শান্তিকুঞ্জ যে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে, সেখানেই অধিকারীরা জেতাতে পারলেন না বিজেপি প্রার্থীকে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। সেখানে বালুরঘাট পুরসভার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ডই তৃণমূলের দখলে। সুকান্তবাবুর নিজের ওয়ার্ডেও জয় অধরা। সেখানে বিজেপি তৃতীয় স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে গঙ্গারামপুর পুরসভা ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিই তৃণমূলের দখলে।
এই প্রথমবার এককভাবে খড়্গপুরে পুরবোর্ড গঠন করতে চলেছে তৃণমূল। এই পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২০টি ওয়ার্ড। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের খাস তালুকে পদ্ম ফুটেছে মাত্র ছয়টি ওয়ার্ডে। অর্জুন সিংয়ের দুর্গ ভাটপাড়াতেও ৩৪টি আসনেই বয়ে গিয়েছে সবুজ ঝড়। আবার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-মজিলপুরে প্রথমবার জয় পেয়েছে তৃণমূল। বহরমপুরে গড় ধরে রাখতে পারেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যদিও বিজেপি মুখপাত্র শমীক বলেছেন, ‘ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে।’ আর সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘ফলের ভবিতব্য জানাই ছিল।’