রাজ্য

রাজ্য় সরকারের উদ্য়োগে খুলেছে উত্তরবঙ্গের একাধিক চা–বাগান, ১০ বছর পর প্রাণ ফিরল পানিঘাটায়

রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক উদ্যোগের ফলে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা একাধিক চা বাগান ফের চালু হওয়ার পথে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক চা শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটতে চলেছে। দার্জিলিংয়ের তিনটি চা বাগান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং আলিপুরদুয়ারের একাধিক বাগানেও নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য শ্রম দফতরের সক্রিয় প্রচেষ্টাই এই ইতিবাচক পরিবর্তনের নেপথ্যে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

এরই মধ্যে এক অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মিরিক মহকুমার অন্তর্গত পানিঘাটা চা বাগান প্রায় এক দশক পর আবার চালু হতে চলেছে। ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যাওয়া এই বাগানের দরজা মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ফের খুলছে। তৃণমূল কংগ্রেসের চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়ন সহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, আগামীকাল, অর্থাৎ ২ মে শুক্রবার থেকেই পানিঘাটা চা বাগানে পুরোদমে কাজ শুরু হবে এবং বাগানটি তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে।

রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এই উদ্যোগের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ উদ্যোগে বন্ধ চা বাগানগুলির জন্য এসওপি (Standard Operating Procedure) তৈরি করা হয়েছে। তারই ফলস্বরূপ একের পর এক বন্ধ চা বাগান আবার খুলতে শুরু করেছে।” পানিঘাটা চা বাগানকে তিনি এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। দার্জিলিং এবং আলিপুরদুয়ারের একাধিক বন্ধ চা বাগান খোলার এই খবরে উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে খুশির হাওয়া বইছে। শ্রম দফতরের নিরলস প্রচেষ্টাতেই এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে।

আলিপুরদুয়ার জেলার পরিসংখ্যানও বেশ আশাব্যঞ্জক। গত বছর, ২০২৪ সালের ১৭ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আলিপুরদুয়ারে ছিলেন, তখন জেলার পাঁচটি বন্ধ চা বাগান খুলে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেও আলিপুরদুয়ারে বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১০টি। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩টিতে। আলিপুরদুয়ারের ডেপুটি লেবার কমিশনার জানিয়েছেন, দ্রুত এই তিনটি বন্ধ চা বাগানও খুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আলিপুরদুয়ার জেলায় মোট ৬১টি চা বাগান রয়েছে, যেখানে প্রায় ৭৮ হাজার স্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন। বেশিরভাগ বাগানই এখন সচল রয়েছে। যে কটি বন্ধ ছিল, তাও একে একে খুলে যাচ্ছে, এবং আরও কয়েকটি চা বাগান খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

পানিঘাটা চা বাগান বন্ধ হওয়ার সময় প্রায় তিনশোর বেশি শ্রমিক সেখানে কাজ করতেন। হঠাৎ বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শ্রমিক পরিবারগুলি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিল। বাগানটি আবার খোলার জন্য বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন এবং বন্ধ চা বাগান খোলার জন্য বিশেষ পদ্ধতি এসওপি চালু করেন। এই উদ্যোগের ফলেই বন্ধ বাগানগুলো দ্রুত খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে দীর্ঘ ১০ বছরের প্রতীক্ষার পর পানিঘাটা চা বাগান খোলার খবরে সেখানকার শ্রমিকরা আনন্দে মেতে উঠেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই ঘটনা উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিকদের জন্য নতুন করে বাঁচার রসদ জুগিয়েছে।

Back to top button