আন্তর্জাতিক

Rushv/sEu: বাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা, সকলকে অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়তে বলল আমেরিকা সহ ৫ দেশ

যেকোনো সময় রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে নিজেদের নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়তে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পাঁচটি দেশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিনীদের ইউক্রেন ছাড়তে আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে স্থানীয় সময় শুক্রবার হোয়াইট হাউস এজন্য ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সতর্ক করে বলেন, ‘ইউক্রেনে বড় ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য রুশ বাহিনী চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। যদিও আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুই বলতে পারবো না, তবে এটা বলতে পারি, বর্তমানে সামরিক আগ্রাসনের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়েছে।’বিজ্ঞাপন

জ্যাক সুলিভানের এমন সতর্কবার্তার পর পরই হোয়াইট হাউস পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন নাগরিকদের ইউক্রেন ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়তে বলেছিলেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ৯ ঘণ্টা ধরে চলা সমঝোতা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার জেরে তিনি এ ঘোষণা দেন।

এ সময় বাইডেন বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম বড় সেনাবাহিনীকে আমাদের সামলাতে হচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই অন্যরকম। যেকোনো সময় পরিস্থিতি বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে।’

এদিকে শুক্রবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে। একই ঘোষণা দিয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নেদারল্যান্ডস সরকার। লাটভিয়া সরকার ইউক্রেনে অবস্থান করা তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়ার কাছ থেকে গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছে

২০১৪ সালে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। এর পর থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনাদের লড়াই চলছে। এ লড়াইয়ে অন্তত ১৪ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অঞ্চলটির বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে। যেকোনো সময় ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে রাশিয়া বারবারই পশ্চিমাদের তোলা এ অভিযোগ অস্বীকার করছে। দেশটি বলছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা মস্কোর নেই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাক্সার টেকনোলজিস দাবি করেছে, ইউক্রেনের কাছে বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। ওই এলাকায় সম্প্রতি স্যাটেলাইটে ধারণকৃত কিছু ছবি প্রকাশ করে এমন দাবি করা হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের ওপর নজর রাখছিল মাক্সার টেকনোলজিস। স্যাটেলাইটে ধারণকৃত কিছু ছবি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ক্রিমিয়া, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল ও বেলারুশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে রুশ সেনা মোতায়েন হতে দেখা গেছে। ছবিগুলো স্থানীয় সময় গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার স্যাটেলাইটে ধারণ করা হয়।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে কৃষ্ণসাগর ও আজভ সাগরে ইউক্রেনের নৌ চলাচলের পথ বন্ধ করে রাখার অভিযোগ তুলেছে ইউক্রেন। আগামী সপ্তাহে ওই দুই সাগরে রাশিয়ার নৌ মহড়া হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে এমন অভিযোগ উঠল। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা অভিযোগ করে বলেন, ‘আজভ সাগর পুরোপুরি অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। কৃষ্ণসাগরও প্রায় পুরোপুরিভাবে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে রুশ বাহিনী।’

রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করতে এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে শক্তিশালী করতে পোল্যান্ডে পৌঁছেছে মার্কিন এফ-১৫ যুদ্ধবিমান। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার সেগুলো দেশটির লাস্ক শহরের একটি বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। ইতিমধ্যে পোল্যান্ডে সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

যদিও চলমান সংকট নিরসনে কূটনৈতিক পথ খোলা রয়েচে বরে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনা প্রক্রিয়া ফলপ্রসু হয়নি। বিবিসি জানিয়েছে, জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সহিংসতা নিরসনে ইউক্রেন ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন। প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে বৈঠক চললেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। দুই পক্ষ কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। যৌথ কোনো চুক্তিও সই হয়নি। তবে বার্লিনে ওই আলোচনার পর ইউক্রেন সরকার জানায়, উভয় পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত রয়েছে।

এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্লাদিমির চিজোভ বলেছেন, কূটনীতির মাধ্যমে ইউক্রেন নিয়ে সৃষ্ট সংকট কমানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করে রাশিয়া। তিনি বলেন, মস্কোর কোথাও হামলা চালানোর ইচ্ছা নেই। তবে সতর্কতা জারি করে বলেন, এমন কোনো উসকানিমূলক আচরণ করা ঠিক হবে না, যাতে রাশিয়া মনোভাব পরিবর্তন করে।’

Back to top button