আন্তর্জাতিক

বিশেষ: ১০০ র বেশি তরুণীকে হত্যার আগে ও পরে ধর্ষণ করেন এই খুনি,শেষে ঘটেছিল করুণ কাণ্ড

বিশ্বের অপরাধ জগতের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত অপরাধী টেড বান্ডি। এক সময় তার নাম শুনলেই ভয় পেত সবাই। টেডের নৃশংসতার গল্প শুনলে আজও গা শিউরে ওঠে। টেডের বিরুদ্ধে ৩০ জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। যদিও অনেকের মতে এই সংখ্যা শতাধিক। বহু ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

১৯৭৪ এবং ১৯৭৮ সালের মধ্যে টেড প্রায় ৩০ জন নারীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পর খুন করে। খুনের পরও মৃত নারীদের আবার ধর্ষণ করত বলেও অভিযোগ উঠেছিল। তার কর্মকাণ্ডে আমেরিকার বাসিন্দারা এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে তার মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ শুনে উল্লসিত জনতা রাস্তায় বেরিয়ে উদ্‌যাপন শুরু করে। টেডের শিকারের তালিকায় ছিল কিশোরী থেকে যুবতীরা। নৃশংস ভাবে নারীদের ধর্ষণ করে খুন করার পর তাদের আবার ধর্ষণ করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এরপর তাদের মৃতদেহ লোপাট করত সে।

টেডের জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৪ নভেম্বর আমেরিকার বার্লিংটনের ভারমন্টে। তার আসল নাম থিওডর রবার্ট কোওয়েল। ছোট থেকে অবশ্য শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র স্বভাবের জন্যই বেশি পরিচিত ছিল টেড। জন্মের আগেই টেডের বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যায়। টেডের মায়ের নাম ছিল এলেনর লুইস কোওয়েল। ছোট থেকেই বহু ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে বড় হতে হয়েছে টেডকে। ছোটবেলায় টেডের দাদু তাকে এবং তার মাকে নিয়মিত মারধর করতেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে টেডের মা ছেলেকে নিয়ে ওয়াশিংটনে চলে আসেন। ওয়াশিংটনে তিনি জনি বান্ডি নামক এক যুবককে বিয়ে করেন।

টেড তার জীবদ্দশায় অনেক বার ঠিকানা বদল করেছে। এর মধ্যে সব থেকে চর্চায় আসে সল্ট লেক সিটির উটার ৫৬৫ ফার্স্ট অ্যাভিনিউের বাড়িটি। এই বাড়িতে থাকাকালীনই সে জীবনের প্রথম খুন করে। ১৯৭৪ সালে টেড মোট চার জন নারীকে খুন করে। টেড বান্ডি ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন, ওয়াশিংটন, আইডাহো, উটা, কলোরাডো এবং ফ্লরিডায় ১৯৭৮ পর্যন্ত বহু নারীকে খুন করে। গ্রেফতারের পর টেড নিজেই এই খুনগুলোর কথা স্বীকার করে। তবে তাকে শুধুমাত্র তিনটি খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মনে করা হয়, ৩০টি খুনের কথা স্বীকার করলেও আসলে তার খুনের সংখ্যা ছিল শতাধিক।

টেড অনেক নারীকে নৃশংসতার সঙ্গে ধর্ষণ করে খুন করলেও কিছু নারী এমনও ছিলেন যারা টেডের হাত থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। টেডের গ্রেফতারের পর বেশ কয়েক জন নারী এগিয়ে এসে আদালতে জানায় কীভাবে তারা টেডের হাত থেকে রক্ষা পান। টেডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া নারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কারেন স্যান্ডলার এবং ক্যাথি ক্লেইনার। ব্রিগহাম ইয়ং ইউনিভার্সিটির ছাত্রী পাম প্রিনও জানিয়েছিলেন ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় টেড তাকে অপহরণের চেষ্টা করে। তবে তিনি টেডকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যান।

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেডের বুদ্ধিমত্তার মান ছিল ১৩৬। তাবড় প্রতিভাবানদের বুদ্ধিমত্তাও হার মানবে এর কাছে। টেড ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিল। ইউনিভার্সিটি অব পুগেট সাউন্ড স্কুল অফ ল-তে নথিভুক্ত হওয়ার আগে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতেও পড়ার সুযোগ পায় সে। বন্ধুত্ব পাতিয়ে বা প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নারীদের ধর্ষণ করে খুন করত টেড। নারীরা সুদর্শন এবং ‘ক্যারিশম্যাটিক’ টেডের প্রেমে পড়তেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কার্যসিদ্ধি করত টেড। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে স্বল্পভাষী টেডের সঙ্গে কথা বলে যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যেত।

টেড ১৯৮০ সালে বিয়েও করেছিল। একাধিক নারীকে খুন এবং ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে বিচার চলাকালীনই ক্যারল অ্যান বুন নামে এক নারীকে বিয়ে করে সে। ক্যারল ‘ওয়াশিংটন স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব ইমার্জেন্সি সার্ভিস’-এর কর্মী ছিলেন। সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ১৯৮৬ সালে ক্যারল এবং টেডের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। রোজ নামে টেড এবং ক্যারলের একটি মেয়েও হয়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত এলিজাবেথ কেন্ডেল নামে এক নারীর সঙ্গে প্রেম ছিল টেডের। তবে কেন্ডেল টেডকে কখনো বিয়ে করেননি। কেন্ডেলের সঙ্গে প্রেম করার সময় থেকে অন্য নারীদের ধর্ষণ করে খুন করতে শুরু করে টেড। টেডের কাজকর্ম নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তিনি সম্পর্কে ইতি টানেন। পরে তিনি টেডের বিরুদ্ধে সাক্ষীও দিয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালে একাধিক নারীকে খুনের তদন্তে নেমে টেডের উপর নজরদারি শুরু করে পুলিশ। তার গাড়ির ট্রাঙ্কে একটি মুখোশ, হাতকড়া এবং ভোঁতা জিনিস দেখতে করেন উটা পুলিশের এক আধিকারিক। এরপর থেকেই কড়া নজরদারি শুরু হয় টেডের উপর। তবে কোনো প্রমাণ হাতে না আসায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছিল না। টেডও বুঝতে পারে যে পুলিশ তার উপর নজর রাখছে। এরপরই নিজের গাড়ি বিক্রি করে দেয় টেড। সেই গাড়ির পরীক্ষা করে তিন জন নিখোঁজ নারীর ডিএনএ পুলিশের হাতে আসে। টেডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এক নারী থানায় তাকে চিহ্নিত করার পরই টেডকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারির পর একবার ফ্লোরিডা এবং দুইবার কলোরাডোর কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। ১৯৭৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি একটি চুরি করা গাড়ি চালানোর অপরাধে তাকে আবারো গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এরপর আর জেল ভেঙে সে পালাতে পারেনি। শেষবার ধরা পড়ার আগে আরো কয়েক জন নারীকে টেড খুন করে। আদালতে শুনানি চলাকালীন টেড বহুবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে। তবে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার কিছু দিন আগেই নিজের দোষ স্বীকার করে টেড। সে আদালতে জানায় যে সে ৩০ জন নারীকে খুন করেছে। কীভাবে সে এই নারীদের খুন করেছে সেই বিবরণ শুনে বিচারকও শিউরে উঠেছিলেন। সে এ-ও ইঙ্গিত করেছিল যে তার খুনের সংখ্যা আরো বেশি ছিল।

আদালত টেডের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। ১৯৮৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ফ্লোরিডার একটি সংশোধনাগারে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে টেডকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পর টেডের মৃতদেহ দাহ করা হয়। ইচ্ছে অনুসারে তার চিতাভস্ম ওয়াশিংটনের ক্যাসকেড পর্বতমালায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। খুন করার পর এই জায়গাতেই সে নারীদের মৃতদেহগুলো ফেলে আসত। টেডের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত একাধিক বই লেখা হয়েছে। সিনেমাও তৈরি হয়েছে অনেক।

সূত্র: আনন্দবাজার

Back to top button