ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে দ. কোরিয়া, আগুনের নিহত ২৪, ঝুঁকিতে রয়েছে ইউনেস্কো ঐতিহ্য

দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২৪-এ পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া এই দাবানলে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। দাবানল এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
দেশটির স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত দাবানলে ২৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।” দাবানলের কারণে দেশজুড়ে নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এবং ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত দুটি স্থান—হাহো ফোক ভিলেজ ও বাইওংসান কনফুসিয়ান অ্যাকাডেমি—পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গত কয়েক দিনে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় এক ডজনেরও বেশি স্থানে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, দাবানলে নিহতদের বেশিরভাগই স্থানীয় বাসিন্দা। তবে এদের মধ্যে অন্তত তিনজন দাবানল নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত কর্মী। এছাড়া পার্বত্য এলাকায় আগুন নেভানোর সময় একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে একজন পাইলটের মৃত্যু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৭,৩৯৮ হেক্টর জমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যার ৮৭ শতাংশই ইউসিয়ং কাউন্টিতে। ক্ষয়ক্ষতির বিচারে এই দাবানলকে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে ‘দ্বিতীয় ভয়াবহ’ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কর্মকর্তারা। এর আগে ২০০০ সালের এপ্রিলে পূর্ব উপকূলে ২৩,৯১৩ হেক্টর জমি পুড়ে যাওয়ার ঘটনা দেশটির সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সরকারের পদক্ষেপ
দাবানলের ভয়াবহতা বিবেচনায় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ৬,৭০০-এর বেশি দমকলকর্মী, ৫,০০০ সেনা ও শতাধিক হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া দাবানল কবলিত এলাকার কারাগার থেকে বন্দিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিরল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হ্যান ডাক-সু জাতীয় জরুরি নিরাপত্তা ও দুর্যোগ সভায় বলেছেন, “টানা পঞ্চম দিন ধরে দাবানল জ্বলছে। এটি নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্বাভাসের সব মডেল ও ধারণাকে এই দাবানল ভুল প্রমাণ করেছে।”
ঐতিহ্য ধ্বংসের আশঙ্কা
দাবানলের কারণে দেশটির বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটেছে। এছাড়া ইউসিয়ংয়ে অবস্থিত ১,৩০০ বছরের পুরোনো গৌনসা মন্দির পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আন্দং শহরের কাছে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত হাহো ফোক ভিলেজ ও বাইওংসান কনফুসিয়ান অ্যাকাডেমির কাছে আগুন পৌঁছে গেছে, যা দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুষ্ক আবহাওয়া ও প্রবল বাতাসের কারণে দাবানল নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকার জানিয়েছে, সব ধরনের সম্পদ ও জনবল ব্যবহার করে এই সংকট মোকাবিলার চেষ্টা চলছে।
সূত্র: এএফপি।