অর্থনীতিনিউজবিনোদন

বিশেষ: শীর্ষ ধনী থেকে শূন্যের কোঠায় অনিল, তার ভাই মুকেশ কীভাবে হলেন ধনকুবের?

করোনাকালে অসংখ্য মানুষ হারিয়েছে তাদের রুজি-রোজগার। তবে অল্প কিছু মানুষের পকেট আরো বেশি মোটা হয়েছে এই সুবাধে। যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের আকাশ-পাতাল তফাত্‍! এশিয়ার অন্যতম ধনীদের শীর্ষে রয়েছেন মুকেশ আম্বানির কথাই বলা যাক। তার বিলাসী জীবন বারবার নজর কাড়ে সাধারণ মানুষের।

কী নেই মুকেশ আম্বানির! বিশ্বের দামি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি থেকে শুরু করে বড় বড় বাড়ির মালিক এবং তার বিলাসিতা সবকিছুকে টপকে যায়। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি এবং টেলিকম শাখা জিওর হাত ধরে আম্বানি পরিবারের অফুরন্ত ধনভান্ডার অব্যাহত রয়েছে। করোনাকালে এগুলোই ছিল তার ব্যবসার মূল হাতিয়ার।

ভারতীয় টেলিকমের তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে ২০১৬ সালের জিওর মাধ্যমে ফোরজি পরিষেবা চালু করেছিল মুকেশ আম্বানি। বছর ঘুরতে না ঘুরতে গ্রাহক সংখ্যা ধারায় প্রায় ১৪০ মিলিয়নে। আম্বানি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম বর্তমান পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। মুকেশ আম্বানি যে গাড়ি চড়েন, সেই দামে একটা বহুতল বাড়িও হয়ে যেতে পারে। তবে আম্বানি পরিবারের ব্যবসা শুরু হয়েছিল প্রচুর পুঁজি নিয়ে নয়।

মুকেশ আম্বানির বাবা ধীরুভাই আম্বানি নিজের চাকরির টাকা অল্প অল্প করে জমিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। ব্যবসার টাকা একটু জমতেই তিনি বিদেশে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন মুম্বাইয়ে। সেখানেই ছোট ঘরে থেকেই শুরু হয় তার স্ট্রাগল। স্থাপন করেন রিলায়েন্স কমার্শিয়াল কর্পোরেশন। যেখানে তিনি শুরু করেন মশলা এবং বিমল কাপড়ের ব্যবসা। কিন্তু তত্‍কালীন বাজারে বিমল কাপড় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সেই কাপড়ের স্টক বিক্রি করতে ধীরুভাই আম্বানি নিজেই মাঠে নেমে কাজ করতে থাকেন।

যে সময় মানুষ ইনভেস্ট কি জানতো না, সেই সময় দাঁড়িয়ে ধীরুভাই আম্বানি ইনভেস্টর এবং কোম্পানির লোকদের এমন কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন যার মাধ্যমে সবাই উপকৃত হন। মাত্র হাতে গোনা কয়েক বছরের মধ্যেই ৭০০ কোটির রেভিনিউ বেড়ে ২০০২ সালে তা দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার। ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর আগেই সমস্ত ব্যবসা তার দুই ছেলে মুকেশ আম্বানি এবং অনিল আম্বানির মধ্যে ভাগ করে দিয়ে গেছেন। ভাগ্যের পরিহাসে অনিল আম্বানি তা ধরে রাখতে পারেননি; কিন্তু মুকেশ আম্বানি সেই সোপানকে আঁকড়ে আজ সবার শীর্ষে।

মুকেশ আম্বানির জীবনযাপনের দিকে তাকানো যায় তাহলে শুধু বিলাসিতার ঝলকানি। তিনি নিজের স্ত্রীকে তিনটি প্রাইভেট জেট উপহার দিয়েছেন। প্রায় ১১০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে। নিজের বিলাসী জীবনযাপন ধরে রাখতে নীতা আম্বানি সব সময় এত দামী দামী শাড়ী, গয়না, ঘড়ি, ব্যাগ ব্যবহার করেন; যা সব সময় সাধারণ মানুষের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এমনকি তিনি কি ব্র্যান্ডের পানি খান তাও সাধারণ মানুষ জানেন!

অনিল আম্বানির চাকা গড়িয়েছে কখন

একটা সময় ছিল, যখন অনিল আম্বানির সম্পত্তি মুকেশ আম্বানির সম্পত্তির চেয়েও ছিল বেশি। ২০০৬ সালে যখন আম্বানি ভাতৃদ্বয় আলাদা হন- তখনও মুকেশ আম্বানির থেকে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি ছিল অনিল আম্বানির হাতে। সেই সময় ভারতের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি ছিলেন অনিল আম্বানি। তার উপরে ২০০৮ সালে বিশ্বের ষষ্ঠ ধনীতম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে অনিল আম্বানির সম্পত্তি ছিল ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মুকেশ আম্বানির সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪২ বিলিয়ন ডলার।

তারপর সময়ের চাকা গড়িয়েছে। ১৩ বছরে ৭.২ লাখ কোটি টাকা সম্পত্তির অধীশ্বর মুকেশ আম্বানি। মার্কিন ডলারের হিসাবে ৯৭ বিলিয়ন। আর অনিলের ভাঁড়ারে? শূন্যতা। কিন্তু কেন এমন অবস্থা? মূলত ঋণের দায়ে। বর্তমানে রিলায়েন্স কম্যুনিকেশন্স, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল, রিলায়েন্স পাওয়ার বর্তমানে কিছুটা ঋণের বোঝা লাঘব করেছে। রিলায়েন্স ইনফ্রা যেমন ৮ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার ঋণভার লাঘব করেছে। এছাড়া বাকি কোম্পানিগুলিই কিছু কিছু করে ঋণ মিটিয়েছে।

২০২০ সালে অনিল আম্বানি দাবি আদালতে করেন যে, তার জীবন যাপন খুবই সাদাসিধে। তিনি বিলাসী জীবন-যাপন করেন বলে যেসব জল্পনা, তা মোটেই সত্য নয়। তাদের কাছে দামী দামী শিল্প সামগ্রীর যে সংগ্রহ আছে, সেগুলোর মালিক তার স্ত্রী বলে দাবি করছেন তিনি।

অনিল আম্বানি বলেন, আমার মনে হয় জিনিসটা সন্মানের সঙ্গে সঠিকভাবে তুলে ধরা দরকার। আমার প্রয়োজন অত বিশাল নয় এবং আমার জীবন খুবই সুশৃঙ্খল। আমার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত বিলাসবহুল জীবন নিয়ে যেসব ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তা একেবারেই জল্পনা-কল্পনা।

Back to top button