“‘বন্ধুত্ব’ চায় বেজিং”-ইউনূস বাংলাদেশে ফিরতেই ভারত নিয়ে সুর নরম করলো চিন

দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যা ও নানা টানাপোড়েনের পর ভারত ও চিন সম্পর্ক নিয়ে একটি ইতিবাচক বার্তা দিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি মনে করেন, ভারত ও চিনের একে অপরের সহযোগী হওয়া উচিত। চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, যা কূটনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই মন্তব্যের ফলে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর:
গতকাল, ১ এপ্রিল, ভারত ও চিন তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। এই বিশেষ দিনে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শুভেচ্ছা বার্তাও বিনিময় করেছেন। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শি জিনপিংয়ের বার্তা:
এই বিশেষ দিনে শি জিনপিং ভারত ও চিনকে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক বিশ্বাস, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা এবং কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় স্থায়ী ও অনুমানযোগ্য সম্পর্ককে দুই দেশ এবং গোটা বিশ্বের জন্য ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন। তিনি ভারত ও চিনের সম্পর্ক আরও মজবুত করার উপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ভারত ও চিনের ঐতিহাসিক প্রভাব এবং বিশ্ব শান্তির জন্য যৌথ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বে দুই দেশের মধ্যে একটি ভালো, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ও সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
কূটনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ:
কূটনীতিবিদরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ভারত ও চিন। এই দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেলে তা প্রযুক্তি ও আর্থিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। তবে বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ইউনূসের চিন সফর:
সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের চিন সফর নিয়েও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। ইউনূসের দেশে ফেরার পরই শি জিনপিংয়ের এই ইতিবাচক বার্তা বিশ্লেষকদের কাছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
ভারত ও চিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ থাকলেও, দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের এই শুভেচ্ছা বার্তা এবং শি জিনপিংয়ের সহযোগী হওয়ার আহ্বান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই ইতিবাচক বার্তা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হয়, সেটাই এখন সময়ের অপেক্ষা।