
কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ নিরীহ পর্যটকের প্রাণহানির পর চরম কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) দেশে অবস্থানরত সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা অবিলম্বে বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে নির্দেশ দিয়েছেন, বর্তমানে যে সব পাকিস্তানি নাগরিক সংশ্লিষ্ট রাজ্যে রয়েছেন, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের tourist দের উপর হামলায় বেশিরভাগই বাইরের রাজ্য থেকে আসা ২৬ জন নিহত হন। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। এই ঘটনার পরেই ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো রকম আপোস করা হবে না। বর্তমানে চিকিৎসা, দর্শন বা আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার মতো বিভিন্ন কারণে যে সব পাকিস্তানি নাগরিক ভারতে এসেছেন, তাদের ভিসা অবিলম্বে বাতিল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন করে আর কোনো পাকিস্তানি নাগরিককে ভিসা ইস্যু করা হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলে এই নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যগুলিকে দ্রুত তাদের রাজ্যে অবস্থানরত সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় তাদের নাম, কোথায় অবস্থান করছেন, কী ধরনের ভিসা আছে, কতদিনের জন্য ভারতে এসেছেন, ইত্যাদি সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে এবং দ্রুততার সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পহেলগাঁও হামলার পর এটি পরিষ্কার যে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ এখনও বন্ধ হয়নি। অতীতে ভারত একাধিকবার পাকিস্তানকে সন্ত্রাস দমনের আহ্বান জানালেও কার্যত তাতে কোনও ফল হয়নি। সে কারণেই এবার ভারত সরাসরি কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক স্তরে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
এই পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি ভারত সরকার আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক আলোচনা স্থগিত রাখা। ভবিষ্যতে পাকিস্তানি নাগরিকদের উপর কোনও রকম তথ্য আদান-প্রদান বা সীমান্ত সফরের অনুমতিও দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
ভারতের এই কড়া পদক্ষেপ পাকিস্তানের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আরও কড়াকড়ি করা হবে। দেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ঘিরে যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাও বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কড়া পদক্ষেপে ভারত একদিকে যেমন সন্ত্রাসবাদ রোখার বার্তা দিচ্ছে, তেমনই আন্তর্জাতিক স্তরেও পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে সক্ষম হবে।