বিনোদন

‘পারিশ্রমিক কম নিয়ে বলিউডে কাজ করেন টোটা!’ সমালোচনাকারীদের যোগ্য জবাব দিলেন রোহিত সেন

টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roychowdhury) অভিনয় জগতে এসেছিলেন নব্বইয়ের দশকে। তখন এত চ্যানেল ছিল না। সিরিয়াল ও টেলিফিল্মের জোয়ারে ভাসছে দূরদর্শন। 2021 সালে আজ টোটার পরিচয় তাঁর নিজস্ব নামের থেকেও বেশি রোহিত সেন নামে। ‘শ্রীময়ী’-তে দর্শকদের অন্যতম পছন্দের চরিত্র রোহিত সেন। কিন্তু এতগুলি বছর টোটার চেহারায় কোনো আঁকি-বুঁকি কাটতে পারেনি। পরিমিত আহার এবং শরীরচর্চা তাঁকে এভারগ্রিন রেখেছে। সেই কারণেই অবলীলায় তিনি মানিয়ে গেছেন ফেলুদার চরিত্রেও।

কিন্তু তবু তিনি ডাউন টু আর্থ, রোহিতদা বা ফেলুদার থেকেও ‘টোটাদা’ ডাকলে বেশি খুশি হন তিনি। কিছুদিন আগেই একটি ফিল্মের শুটিংয়ের সময় সহ-অভিনেতা তাঁকে ‘স‍্যার’ বলে ডাকলে অনায়াসে তিনি তাঁকে ‘দাদা’ ডাকতে বলে সহজ করে দিয়েছেন পরিবেশ। এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চালু মিম নিয়ে কথা বললেন টোটা। মিম বলছে ‘দাদা ডাকলেও পরে সে প্রেমিক হয়ে যায়’, উদাহরণ হিসাবে দেওয়া হয়েছে রোহিত সেনের প্রসঙ্গ। টোটা বলেছেন, এটাও একধরনের সাফল্য। রোহিত সেনকে চিনিয়েছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Ganguly)। তাঁর কলম এই চরিত্রকে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। অপরদিকে ফেলুদার আকর্ষণ আলাদা। ষাট বছর ধরে সিংহাসনে থাকা ফেলুদা হতে টোটার দীর্ঘ পরিশ্রম ও অপেক্ষা সহযোগিতা করেছে। মাঝে মাঝেই সবকিছু তাঁর কাছে স্বপ্ন মনে হয়।

তবে ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituporno Ghosh) পরিচালিত ‘চোখের বালি’-তে বিহারীর চরিত্রের সাফল্য আজও তাঁর কাছে স্বপ্ন যা তিনি জীবনের প্রতি মুহূর্তে যাপন করেন। ইতিমধ‍্যে প্রায়শই বিয়ের সম্মন্ধ আসছে। ‘চোখের বালি’-র সময় থেকেই তাঁর স্ত্রী শর্মিলি (Sharmili) এইসব সামলাতে সিদ্ধহস্ত। আগে তিনি শুনতেন ‘বিহারীর বৌ’, এখন শোনেন ‘রোহিত সেনের স্ত্রী’। তবে তিনিও এগুলি উপভোগ করেন। তবে টোটা কিন্তু বিয়ের আগে এত রোম‍্যান্টিক ছিলেন না। শর্মিলি আঠারো, টোটা বাইশ। শুরু হয়েছিল প্রেম। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলেন বাকি জীবনটা শর্মিলির সাথেই কাটাবেন।

তবে টোটার যোগ্যতার পরিমাপ প্রথম করেছিলেন ঋতুপর্ণ। বর্তমানের খ্যাতি তাঁর অনেক আগেই পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তাঁর অনুরাগীরা। কিন্তু টোটা তা নিয়ে আফশোস করেন না। তাঁর একটাই মন্ত্র ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। তবে এই মুহূর্তে তিনি টোটা সৃজিত (Srijit Mukherjee)-কে তাড়া দিচ্ছেন আগামী ফেলুদা সিরিজের জন্য।

তবে টোটার সাফল্য অনেকের চক্ষুশূল। তাঁদের মতে, টোটা কম পারিশ্রমিকে মুম্বইতে কাজ করেন। টোটা বলেছেন, টলিউডের অধিকাংশ মানুষের কাঁকড়াপনা দেখেই বোঝা যা, তাঁরা কর্কট রাশি। তাঁরা বোঝেন না, কলকাতা থেকে অভিনেতা নিয়ে যাওয়ার খরচ অনেক বেশি। তার থাকা-খাওয়ার যাবতীয় দায়িত্ব মুম্বই বহন করে। কিন্তু তবু কাজের মান দেখে টোটাকে তাঁরা ডেকেছেন। তাঁকেও মুম্বইয়ে অডিশন দিতে হয়েছে বলে জানালেন টোটা। বলিউডে তিনি ফ্রেশ ফেস। যেখানে বাংলা ফিল্মের কাজ আঠারো দিনে শেষ হয়, সেখানে হিন্দি ফিল্ম শেষ হয় ষাট দিনে। এছাড়াও বলিউডে বিষয় ভিত্তিক ফিল্ম হয় যাতে অনেক আগে থেকেই নিপুণ বাংলা। এই কারণে বাঙালি শিল্পীদের ডাকা হয় বলিউডে। করণ জোহর (Karan Johar)-এর কথা বলতে গিয়ে টোটা বললেন, নাম হলেই বদনাম হবে, এটাই পৃথিবীর নিয়ম। কিন্তু করণের সঙ্গে কাজ করে টোটার ভালো লেগেছে। তিনি জানিয়েছেন, করণ অত্যন্ত ভদ্র ও মার্জিত। তিনি শিল্পীদের যথেষ্ট সম্মান দেন যা বাংলায় হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ দিতে জানেন।

তবে টোটার ক্ষেত্রে একটি অদ্ভুত ব্যাপার হল, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক নেই। আসলে মানুষটা কোনোদিন বিতর্ক পছন্দ করেননি। অবসর সময় পরিবারের সঙ্গে কাটান টোটা। ভালোবাসেন শরীরচর্চা করতে, বই পড়তে, একা একা হাঁটতে। জীবনকে ইতিবাচক করেছেন তিনি। তবু তাঁর হৃদয়ে রয়ে গিয়েছে ছাইচাপা বারুদ যা প্রকাশিত হয় অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী নামে।

Back to top button