বিনোদন

‘গলা ভালো নয়’ বলে লতাকে একসময় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রযোজক

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। মারাঠি পরিবারে লতা মঙ্গেশকরের জন্ম। বাবা তাঁকে লক্ষ্মী বলেই ডাকতেন। লতার বাবার নাম দীননাথ মঙ্গেশকর।

লতাকে ছোটবেলায় হেমা বলে ডাকা হতো। আগে হেমা নাম থাকলেও বাবার ‘ভাব বন্ধন’ নাটকের ‘লতিকা’র চরিত্রে প্রভাবিত হয়ে হেমার নাম বদল করে রাখা হয় লতা। পরে সেই নামে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন তিনি। ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত একমাত্র মানুষ তিনি, জীবিত অবস্থায় যাঁর নামে পুরস্কার দেওয়া হত।

হিন্দি ছবি ‘মহল’-এ তার গাওয়া গান ‘আয়েগা আনেওয়ালার’ ৭০ বছর পেরিয়ে গেল। গানের বাইরে কোনো কিছুতে জড়াননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধ। অর্থের তাগিদেই ছবিতে অভিনয় করতে হয়েছিল। চলচ্চিত্রে অভিনয় ১৩ বছর বয়সে। কিন্তু মেকআপ, আলো, লোকজন, গ্ল্যামার একদম ভালো লাগেনি লতার! সে কারণে আর অভিনয় করার কথা ভাবেননি তিনি। পরে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অভিনয় প্রসঙ্গ এলেই এ কথা জানিয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।

জীবনে প্রথম যখন বাবার সঙ্গে মঞ্চে উঠেছিলেন তখন বয়স মাত্র ৯ বছর। বাবা বার বার বলেছেন, অনেক কষ্টে মেয়েকে মঞ্চে তুলতে পেরেছেন। লতা বারবার বলেছেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রাম তাঁকে লতা মঙ্গেশকর হিসেবে গড়ে তুলেছে। তিনি মনে করতেন, মাটি থেকে উঠে আসা আর মাটির সঙ্গে লেগে থাকা তারকারাই সত্যিকারের শিল্পী।

১৯৪২ সালে মারাঠি চলচ্চিত্র ‘কিতী হসাল’-এ প্রথম গান রেকর্ড করেন লতা। ১৯৪৫ সালে ‘নবযুগ চিত্রপট’ মুম্বাই পাড়ি দেয়। লতার প্রথম উপার্জন ছিল ২৫ টাকা। প্রথম বার মঞ্চে গাওয়ার জন্য লতা ওই ২৫ টাকা পান।

এবার লতা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখতে আরম্ভ করেন ওস্তাদ আমন আলি খানের কাছে। লতার দায়িত্ব নেওয়া গুলাম হায়দার তাকে আলাপ করিয়ে দেন প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। শশধর মুখোপাধ্যায় লতার গলার স্বর শুনে বলেছিলেন, ‘বড্ড সরু গলা’।

কিন্তু গুলাম হায়দার জানতেন, এমন এক দিন আসবে যখন সবাই এই লতার পায়ে পড়ে থাকবে গান রেকর্ডিংয়ের জন্য। হায়দারের ‘মজবুর’ চলচ্চিত্রে ১৯৪৮ সালে গান রেকর্ড করেন লতা। এর পর বেশ কিছু সুযোগ এলেও সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছিল না। অভিযোগ ছিল, নুরজাহানকে নকল করেন লতা।

দিলীপ কুমার লতার উর্দু উচ্চারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন! লতা সমালোচনার গুরুত্ব দিলেন। এরপর উর্দু শিখতে শুরু করেন। অবশেষে ১৯৪৯ সালে হিট হয় ‘আয়েগা আনেওয়ালা’। সেখান থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

সেই থেকে নব্বইয়ের দশকে চলচ্চিত্রের ক্যানভাস বদলে গেলেও লতা রইলেন স্বমহিমায়। তাবড় তাবড় শিল্পীদের কেউ বাদ দেওয়ার স্পর্ধা দেখাননি লতাকে। প্রখ্যাত এই সঙ্গীতশিল্পীকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অফিসার দে লা লিজিয়ঁ দ্য ’নর প্রদান করেছিল সে দেশের সরকার।

রাজ সিংহ দুঙ্গারপুর লতার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি বলতেন, লতা গলার ব্যাপারে এত যত্নশীল যে, ভালোবাসলেও আইসক্রিম ছুঁয়ে দেখেন না। ভরপেট কখনো খেতেন না।

ছদ্মনামে গানের পরিচালনাও করেছেন লতা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বার বার যখন ‘আনন্দ ঘন’ নামের কাউকে ডাকা হচ্ছিল, তথ্য বলছিল তিনি সেখানে উপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু কেউ পুরস্কার নিতে উঠছিল না মঞ্চে। অবশেষে লতা উঠে পুরস্কার নেন। মারাঠি চলচ্চিত্রের রহস্যময় সঙ্গীত পরিচালক আনন্দ ঘন-র রহস্য এভাবেই সবার সামনে আসে।

সেই নক্ষত্রের মহাপ্রয়াণ ঘটলো। তার জন্য দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

Back to top button