বিনোদন

স্কুলে ড্রপ আউট হয়েও রাজ্ করেছেন বলিউড, জেনেনিন কমেডি কিং জনি লিভারের জীবন কাহিনী

বলিউডে বহুল পরিচিত নাম ও আইকনিক কমেডিয়ানদের মধ্যে একজন হলেন জনি লিভার। অভিনেতা, কৌতুকশিল্পী হিসাবে পরিচিতি মিললেও পড়ালেখায় বেশি দূর এগোতে পারেননি এ অভিনেতা। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই স্কুল ছাড়তে হয়েছিল তাকে। মত্ত বাবার সঙ্গে শৈশব কাটানো মোটেও সুখের ছিল না। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন জনি লিভার।

কাজ খুঁজতে অন্ধ্রপ্রদেশ ছেড়ে নিজের বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই) আসার কথা বলতে গিয়ে কঠিন শৈশবের কথা জানিয়েছেন জনি লিভার। অর্থের অভাবেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়তে পড়তেই স্কুল ছাড়তে হয় তাকে।

জনি লিভার জানিয়েছেন, আমার বাবা মদ্যপ ছিলেন, যার কারণে তিনি আমাদের প্রতি কখনই মনোযোগ দেননি। তাই কিছু দিন পর আমি বিরক্ত হয়ে স্কুল ছেড়েছি। কিন্তু স্কুলে পড়ার সময় অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, শিক্ষকরা ভীষণ ভালোবাসতেন। সবাইকে নকল করে বেড়াতাম।
আমি যাতে স্কুলে যাই, সে জন্য স্কুলের বেতন, জামাকাপড় কিনে দিতে চেয়েছিলেন শিক্ষকরা।

প্রসঙ্গত স্কুল ছাড়ার পর মুম্বাইয়ের রাস্তায় কলম বিক্রি করতেন জনি, আবার তারকাদের ডায়ালগ, নাচ নকল করে আয়-রোজগার করতেন।বহু কষ্ট করে এই অভিনেতা নিজের জায়গা তৈরী করেছিলেন। সম্প্রতি এই অভিনেতা ষাট এ পা রাখলেন। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের প্রকাশম-এ এক খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জনি লিভারের শৈশবে নাম ছিল জন রাও প্রকাশ রাও জানুমালা। শৈশবেই তাঁর পরিবার মুম্বইয়ের ধারভি অঞ্চলে চলে আসেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। জনির বাবা হিন্দুস্থান উনিলিভার কোম্পানির অপারেটর ছিলেন। যার ফলে তাদের সংসারে দারিদ্র লেগেই থাকতো। ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন জনি।তিন বোন ও দুই ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। এবং তিনি মুম্বাইয়ের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পেন বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

জনি চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে গেলেও তার ভিতরে স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। তিনি ছোটবেলা থেকেই খুব ভালো নকল করতে পারতেন। জনির বরাবর ইচ্ছা ছিল কমেডি চরিত্রে অভিনয় করার। কিন্তু সেই সময় জনি ভেবেছিলেন যে তিনি যেন ছেড়া কথায় শুয়ে লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখছেন যা হবে না। একটু বড় হতেই জনির বাবা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার কোম্পানিতে তাঁকে কাজে ঢুকিয়ে দেন। সেখানে জনি প্রায়ই সহকর্মীদের বিভিন্ন অভিনেতার মিমিক্রি করে দেখাতেন।তারা তাদের সেই মিমিক্রির প্রশংসা করতেন। তিনি একবার হিন্দুস্থান উনিলিভার কোম্পানির কয়েকজন সিনিয়ার অফিসারদের সামনে ফাংশানে মিমিক্রি করে দেখিয়েছিলেন। তখন সেই সিনিয়ার অফিসাররাই তার নাম দিয়েছিলেন জনি লিভার। ‘লিভার’ অর্থে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার-এর ‘লিভার’শব্দটি। সেখান থেকেই তিনি সিনিয়ার অফিসারদের সূত্রেই ধীরে ধীরে কমেডি শোয়ের অফার পেতে থাকেন।তাঁর কমেডি শো এতটাই বিখ্যাত হতে শুরু করেছিল যে একসময় শোয়ের চাপে ১৯৮১ সালে হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল জনিকে।

পরে জনি কমেডি শো-এর সূত্র ধরেই কল্যাণজী-আনন্দজীর গ্রুপে যোগ দেওয়ার সুযোগ এল জনির কাছে। এই গ্রূপের মাধ্যমেই তিনি আন্তর্জাতিক মানের কমেডিয়ান হয়ে উঠলেন। জনিই হলেন সমগ্র ভারতের প্রথম ‘মাস পপুলার স্ট‍্যান্ড-আপ কমেডিয়ান’। জনির প্রথম ফিল্ম ছিল ‘তুম পর হাম কুরবান’। সেই ফিল্মেই অভিনয় করতে গিয়ে সুনীল দত্তের সাথে চোখে পড়েন জনি। জহুরী জহর চিনলেন। 1982 সালে সুনীল দত্ত ‘দর্দ কা রিস্তা’ ফিল্মে একটি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জনিকে মনোনীত করেন। সেই থেকেই এক কিংবদন্তির হাত ধরে তার কিংবদন্তি হয়ে ওঠার জার্নি শুরু হয়। অদ্ভুত এই মানুষটি। লেজেন্ড হওয়া সত্ত্বেও এখনও অবধি অহঙ্কার দেখাতে শিখলেন না। তিনি এখনো অবধি ৩০০ টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বর্তমানে তিনি বলিউডের সেরা কমেডিয়ান।

Back to top button