বিনোদন

Pari-Taslima: জেল থেকে ছাড়া পেয়েই আশ্রয়হীন পরীমণি,‘ষড়যন্ত্র’, বলে তোপ দাগলেন তসলিমা

বিতর্কের শিরোনামে বাংলাদেশের নায়িকা পরীমণি (Porimoni)। অগস্ট মাসের গোড়ার দিকে মাদককান্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন পরীমণি। কয়েক সপ্তাহ জেলে থাকার পর 31 শে অগস্ট জামিন পেলেন তিনি। তবে এদিন কোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করলেও সন্ধ্যা অবধি কাগজপত্র তৈরি না হওয়ায় জেল থেকে ছাড়া পাননি পরীমণি। ফলে পয়লা সেপ্টেম্বর তাঁর জামিন মঞ্জুর হয় ও জেলের বাইরে আসেন তিনি। যতদিন পরীমণি জেলে ছিলেন, তাঁকে নিয়ে ট্রোলে ভরে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ট্রোলারদের মোক্ষম জবাব দিলেন পরীমণি।

জেল থেকে বেরোনোর সময় তাঁর পরনে ছিল সাদা ওড়নার ব্যান্দানা, সাদা টি-শার্ট ও চোখে সানগ্লাস। হুডখোলা গাড়িতে চড়ে হাসিমুখে পরীমণি হাত নাড়ছিলেন উচ্ছ্বসিত অনুরাগীদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু হাতে মেহেন্দি দিয়ে ইংরাজিতে সাফ লেখা ছিল কয়েকটি শব্দ “ডোন্ট লাভ মি, আই অ্যাম আ বিচ”। তা ধরা পড়ে গেল সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। পরীমণি যেন বুঝিয়ে দিলেন, আজও তিনি কোনো ট্রোলারকে পাত্তা দেন না। কোনো সমালোচনার ধার ধারেন না।

কারাগার থেকে বাড়ি ফিরেই ধাক্কা খেলেন পরীমনি। জানতে পারলেন, তাকে জানানো হয়েছে বনানীর সেই বাড়িতাঁকে ছেড়ে দিতে হবে।

পরীমনি বললেন, ‘কারাগার থেকে ঘরে ঢোকার পর বাসা ছাড়ার নোটিশ দেখতে পেলাম। এখন কি তাহলে আমার বসবাসের অধিকারটা পর্যন্ত কেড়ে নিচ্ছে ওরা? ওরা যা চেয়েছিল, তা-ই কি হচ্ছে? আমি কি তাহলে ঢাকা ছেড়ে চলে যাব, নাকি দেশ ছেড়ে চলে যাব?’

পরিমনির পাশে দাঁড়িয়ে কলম ধরলেন তাসলিমা নাসরিন তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন –

“পরীমণি জেল থেকে বেরোলো, বাড়িতে ঢুকলো আর দেখলো তাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে বাড়িওয়ালা। এই ভয়ংকর দুঃসময়কে আমি খুব ভালো জানি, যেহেতু নিজের জীবনেই ঘটেছে এমন ঘটনা। মনে পড়ছে কলকাতার সেই দিনগুলোর কথা। ৭ নম্বর রওডন স্ট্রিটে ডাক্তার দেবল সেনের বাড়িতে আমি তখন ভাড়া থাকি। ২০০৭ সাল। পুলিশ কমিশনার এসে জানিয়ে যাচ্ছেন আমাকে দেশ ছাড়তে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী, দেশ যদি আপাতত না-ও ছাড়ি, রাজ্য আমাকে আজ বা কালের মধ্যেই ছাড়তে হবে। দেশের দরজা বহুকাল বন্ধ। ইউরোপ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রাণের টানে আর ভাষার টানে আশ্রয় নিলাম, আর আমাকে কিনা এই আশ্রয়টিও ছাড়তে হবে, কোথাও তো আর ঘর বাড়ি নেই আমার, যাবো কোথায়!

আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে নিতে চাইছে কারা! আমি সম্ভবত যত না রাজনীতিকদের ষড়যন্ত্রের শিকার, তার চেয়ে বেশি শিকার সাহিত্যের মাফিয়া ডনদের রাজনীতির। যখন আশে পাশে কেউ নেই, বিপদ দেখে বন্ধুদের উপস্থিতি একশ’ থেকে প্রায় শূন্যে চলে এলো, একা একা আমি চিৎকার করছি, আমি রাজ্য ছাড়বো না, শহর ছাড়বো না, বাড়ি ছাড়বো না, কারণ আমি কোনও অন্যায় করিনি, আমি মানবতার কথা লিখি। মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করা, মানবতার কথা লেখা অন্যায় তো নয়!

ভালোবেসে এক বাঙালি লেখক বাংলায় বাস করছে, তাকে বাংলা থেকে বের করে দেওয়া, তাকে নিষিদ্ধ করা মানে তার লেখক সত্ত্বাকে ধ্বংস করে দেওয়া— তাই আমি অস্বীকার করেছিলাম রাজ্য ছাড়তে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন ফোন করে বললেন আমাকে রাজ্য ছাড়তেই হবে, বুঝলাম যাদের উচিত ছিল পাশে দাঁড়াবার, তারাই পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কলকাতা তো দেখিয়ে দিয়েছে লেখকেরা কী করে আরেক লেখকের বই নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়, লেখকেরা কী করে আরেক লেখকের সর্বনাশ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

চারদিক থেকে যখন অন্ধকার নেমে আসছে, তখন আমার বাড়িওয়ালা আমাকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন! সম্ভবত মুখ্যমন্ত্রীই বাড়িওয়ালাকে বলেছিলেন ওই নোটিশটি দিতে। ষড়যন্ত্র কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।

বাড়ি ছাড়ার নোটিশটি হাতে নিয়ে পরীমণি বলছে, ‘আমি এখন কোথায় যাবো, কে আমাকে এই সময় বাড়ি ভাড়া দেবে, আমাকে কি তাহলে ঢাকা ছাড়তে হবে, দেশ ছাড়তে হবে!!’

এরকম আমিও বলেছিলাম সেদিন!

পরীমণির অসহায়তা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করছি।

তবে পরীমণির শত্রু যেমন কম নয়, অনুরাগী শুভানুধ্যায়ীও তেমন কম নয়, তারা এই দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়াবে, আমার বিশ্বাস।

অসহায় আমার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। প্রথমে রাজ্য, তারপর দেশ ছাড়তে আমাকে বাধ্য করা হয়েছিল।”

Back to top button