কলকাতানিউজ

নিয়োগ দুর্নীতিতে নয়া মোড়! চাকরিহারাদের ‘গ্রুপ সি’ পদে কাজের ব্যবস্থা, মানবিক আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর; তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কড়া মন্তব্যের আবহেই এই বিষয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, রাজ্যে প্রায় ২১ হাজার শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও আইনি জটিলতার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে। তিনি আরও বলেন, চাকরিহারাদের অন্তত গ্রুপ সি পদে কাজ দেওয়ার জন্য আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক আবেদন ও আশ্বাস
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা চাকরি করতেন, যাঁরা ‘দাগি’ নন, তাঁদের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। ১০-১২ বছর চাকরি করেছেন বলে তাঁদের বয়সে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞতার জন্য বাড়তি নম্বরও দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, আদালতের নির্দেশে যাঁরা শিক্ষক হিসেবে অযোগ্য প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁদের জন্য গ্রুপ সি বা গ্রুপ ডি-তে চাকরির ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সে বিষয়ে তিনি আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের সরকার মানবিক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক নয়, মানবিক।” তিনি আরও আশ্বস্ত করেন যে, আইনি প্রক্রিয়া মিটে গেলেই নতুন নিয়োগের জন্য পরীক্ষা হবে এবং তিনি কাউকে হতাশ হতে বারণ করেন।

বিরোধীদের কড়া প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পর বিরোধী দলগুলি এবং চাকরিপ্রার্থীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

চাকরিহারা শিক্ষক সুমন বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, “এই যে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, যোগ্যতার তালিকা প্রকাশিত হলে, পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাই নেই। রাজ্য সরকার মানবিক হয়ে পরীক্ষা স্থগিত করুক।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “১৮০৬ জন অযোগ্য, চাকরিগুলি কারা বিক্রি করল? এদের কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না?”

আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে “অবাস্তব” বলে অভিহিত করে বলেন, “আইনি পথে এই ধরনের ব্যবস্থা হয় না। এসব করে আরও আইনি জটিলতা তৈরি হবে।” তিনি অভিযোগ করেন যে, সরকার ‘দাগি’দের বাঁচানোর চেষ্টা করছে, কারণ তালিকার অধিকাংশই শাসকদলের লোক।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূলের “সীমাহীন লোভ, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং লাগামছাড়া লুঠ”-কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “মেধা প্রতারিত হলে কোথায় যাবে, কালীঘাটে গিয়ে কাঁদবে? সে তো আদালতে যাবে!”

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী রোজ যেভাবে ‘দাগি’দের হয়ে সওয়াল করছেন, তাতে সুপ্রিম কোর্টও বিস্ময় প্রকাশ করছে। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর বাহিনী সবচেয়ে ‘দাগি’। ওঁরা ‘দাগি’দের হেডমাস্টার।”

অন্যদিকে, তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপকে সমর্থন করে বলেন, “যদি ধরেও নেওয়া হয় অন্যায়ভাবে চাকরি হয়েছিল, একই অপরাধে কতবার শাস্তি পাবেন! … মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের পাশে ছিলেন, আছেন, থাকবেন।”

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের এই টানাপোড়েন এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

Back to top button