
ঠাকুরনগরের বারুণী মেলায় এবার দেখা গেল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন বিজেপির বিধায়ক অসীম সরকার। এই ঘটনা নিয়ে জল্পনা শুরু হতেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলীয় বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “কেউ মতুয়াবাড়ির লোক হলে শ্রদ্ধা করা যাবে না, এটা বিজেপি বলেনি।” এই ঘটনা মতুয়া সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ঠাকুরনগরের ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলা। এই সময় মতুয়া ভক্তরা কামনা সাগরে পুণ্যস্নানে অংশ নেন। বুধবার সন্ধ্যায় ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে অসীম সরকার মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করেন। গত বছর বারুণী মেলায় মমতাবালা ও শান্তনু ঠাকুর গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘাতের পর এই ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
বৃহস্পতিবার মেলায় পদব্রজে অংশ নেন শুভেন্দু অধিকারী। অসীম সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, “আমি পদব্রজে এসেছি। এটা একটা আলাদা পরিবেশ। ঠাকুরবাড়ির মাকে কেন প্রণাম করবেন না? ঠিক করেছেন।” তিনি আরও যোগ করেন, “কেউ মতুয়াবাড়ির লোক হলে শ্রদ্ধা করা যাবে না, এটা বিজেপি কখনও বলেনি।” শুভেন্দুর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মমতাবালা ঠাকুরও শুভেন্দুকে মেলায় স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ঠাকুরবাড়িতে সবার আসার অধিকার আছে। সব ধর্ম-রাজনীতির লোক আসতে পারেন। এটা ভক্ত ও ভগবানের মহামিলনের জায়গা।” তাঁর এই উদার মনোভাব দুই শিবিরের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মতুয়া রাজনীতির পটভূমি
ঠাকুরনগরের ঠাকুর পরিবারের চারপাশে এ অঞ্চলের রাজনীতি আবর্তিত হয়। মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত, আর শান্তনু ঠাকুর বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দুজনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। বারুণী মেলার দায়িত্ব নিয়েও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলেছে। আদালতের নির্দেশে মমতাবালা এই দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে এবারের ঘটনা কি দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলার সূচনা?
দুই শিবিরের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, “আমার বোধদয় হয়েছে।” অন্যদিকে, অসীম সরকার বুধবার সন্ধ্যায় মন্তব্য করেন, “মা তো মা-ই হয়।” মমতাবালা ঠাকুরের প্রতিক্রিয়া ছিল, “সংসার থাকলে ভুল বোঝাবুঝি হয়। এটা জগতের নিয়ম।” এই মন্তব্যগুলো থেকে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যেও পারিবারিক বন্ধনের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে।
জল্পনা ও সম্ভাবনা
এই ঘটনা কেবল ধর্মীয় শ্রদ্ধার প্রকাশ, না কি রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মোড় আনার ইঙ্গিত—তা নিয়ে জল্পনা চলছে। গত বছরের সংঘাতের পর এবার দুই শিবিরের মধ্যে শান্তির সম্ভাবনা দেখা দিলেও, আগামী দিনে এর প্রভাব মতুয়া ভোটের রাজনীতিতে কীভাবে পড়বে, সেটাই দেখার বিষয়।







