কলকাতা

পূর্ব কলকাতা জলাভূমি থেকে বিলুপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি

শহরে পাখির প্রজাতি দিন দিন কমছে। পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে না বিশেষ। তাই নিয়ে বহু চর্চাও হয়েছে। এই ইট, কাঠ, পাথরের শহরে পক্ষীপ্রেমীদের একমাত্র আগ্রহের জায়গা পূর্ব কলকাতা জলাভূমি। ১৯৯০ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক এই জলাভূমি এলাকায় প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখি চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে সেই রিপোর্ট আজ অতীত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের এক ছাত্রের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৯-২০২২ সময়কালে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় মাত্র ১১২টি প্রজাতির পাখি চিহ্নিত করা গিয়েছে। অর্থাৎ ৩২ বছরের মধ্যে এই এলাকার ৫০ শতাংশের বেশি পাখির প্রজাতি স্রেফ হারিয়ে গিয়েছে বা লুপ্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ছিল ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ডে। এই উপলক্ষে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় একটি কর্মশালা আয়োজন করে শিবপুর দীনবন্ধু ইনস্টিটিউশন (কলেজ)। সেখানে হাজির ছিলেন কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ইকোলজি অ্যান্ড বায়ো ডাইভারসিটি ইউনিটের ৩০ জন ছাত্রছাত্রী। এখানে মূলত বিভিন্ন পাখির প্রজাতি চিহ্নিতকরণের প্রশিক্ষণ দেন কলেজের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক ডঃ শুভেন্দু মজুমদার। তাঁকে সহায়তা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের দুই পড়ুয়া সৌভিক বারিক এবং অন্তরা সরকার।

সৌভিক পূর্ব কলকাতা জলাভূমির পাখি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি জানান, এই এলাকা এক সময় পক্ষীকুলের কাছে স্বর্গরাজ্য ছিল। ইদানিং আর সেই পরিস্থিতি নেই। অনেক প্রজাতির পাখি লুপ্ত হয়েছে বা এখানে আর দেখতে পাওয়া যায় না। এর মূল কারণ, জলাভূমি ভরাট করে ক্রমবর্ধমান নগরায়ন। এছাড়া রয়েছে দূষণ। বায়ু এবং জল দূষণের জেরে পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তার ফলে শীতের মরশুমেও পরিযায়ী পাখিরা আগের মতো আসছে না। ২০১৯ সাল থেকে পূর্ব কলকাতা জলাভূমি নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি অন্তরা সরকারও পাখি নিয়ে চর্চা করছেন। তাঁদের পরামর্শ দিচ্ছেন শুভেন্দুবাবু। তিনি বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের সামনে এই বিষয় তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে। এখনই সতর্ক না হলে পাখির প্রজাতি আরও কমে যাবে। সল্টলেক সেক্টর ফাইভের পাশে নলবন ভেড়িতে এই কর্মশালা আয়োজন করা হয় এদিন। সেখানে ৩০টি প্রজাতির পাখি চিহ্নিত করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল টাফটেড ডাক। এই প্রজাতির প্রায় ১০০টি পাখি দেখা গিয়েছে। পাখিটি শীতকালে সাইবেরিয়া থেকে এ শহরে আসে। এছাড়াও দেখা গিয়েছে কাজল পাখি, একাধিক প্রজাতির মাছরাঙা, ফটকা, স্পটেড ডাভ (ঘুঘু), গো-বক ইত্যাদি।

এদিকে, এদিন ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ডে উপলক্ষে আলোচনা সভা সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজ্য সরকারের বনদপ্তর, কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো ও ডব্লুডব্লুএফ ইন্ডিয়া। প্রায় ১০০ কলেজ পড়ুয়া ও স্বেচ্ছাসেবক এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

Back to top button