বিশেষ: সত্যিকার বড়লোক হওয়ার সঠিক পদ্ধতি, জেনেনিন ‘থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটি থেকে
বড়লোক হওয়ার উপায় – শিরোনামটি দেখে হয়তো মনে হবে, এখানে তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার কৌশল নিয়ে কথা বলা হবে। কিন্তু ব্যাপারটি তার ঠিক বিপরীত। আমরা আজ যে বই থেকে আপনাকে বড়লোক হওয়ার উপায় বলব, তার নাম “থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ”। বইটি লিখেছেন নেপোলিয়ন হিল।
যদিও বইটির টাইটেল দেখে মনে হয়, এটা শুধু টাকা পয়সার দিক দিয়ে বড়লোক হবার উপায় এর কথা বলেছে – কিন্তু পড়তে গিয়ে দেখা গেল, বইটির জ্ঞান আপনি যে কোনও ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সফলতা পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি যদি আপনার সময়ের ৫০০ জন সফলতম মানুষের সাথে সময় কাটিয়ে, তাঁদের ইনটারভিউ নিয়ে, তাঁদের সফল হওয়ার সবচেয়ে কমন বিষয়গুলো একটি বইয়ে নিয়ে আসেন – সেটা অবশ্যই সফল হওয়ার একটি সেরা গাইড হবে। নেপোলিয়ন হিল ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁর সময়ের সবচেয়ে সফল ৫০০ জন মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে (এঁদের মধ্যে এ্যান্ড্রু কার্নেগী এবং টমাস আলভা এডিসন এর মত মানুষও ছিলেন) ২০ বছর সময় নিয়ে তিনি বইটি শেষ করেন।
১৯৩৭ সালে প্রকাশ হওয়া এই সেলফ্ ডেভেলপমেন্ট মাস্টারপিসটি আজও সমান ভাবে জনপ্রিয়। আজ পর্যন্ত বইটির ৩০ মিলিয়ন কপিরও বেশি বৈধ ভাবে বিক্রী হয়েছে। আর পাইরেটেড কপি এবং ই-বুক খুব সম্ভবত বৈধ বিক্রীকেও ছাড়িয়ে গেছে।
বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করা
লেখক বলেন, ধনী বা বড়লোক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে। রাতারাতি সত্যিকার বড়লোক কেউ হতে পারে না। এই দীর্ঘ সময় ধরে মোটিভেশন ধরে রাখা অনেক সময়েই কঠিন হয়ে যায়। আপনার যদি লক্ষ্য থাকে, ৫ বছর পর ১ কোটি টাকার মালিক হবেন – তাহলে প্রথম বছর যখন দেখবেন ১০ লাখ টাকাও আয় করতে পারেননি – তখন একটু হতাশা আসা স্বাভাবিক।
এই অবস্থা যাতে না হয়, সেজন্য লেখক একটি ভালো সমাধান দিয়েছেন। তাঁর ভাষায় এটা “Organized Planning” – বা গোছানো পরিকল্পনা। আপনার বড় লক্ষ্যটিকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করুন। তারপর এক সময়ে মাত্র একটি ছোট লক্ষ্য পূরণে আপনার সব মনোযোগ দিন। একটি বড় লক্ষ্যকে ১০টি ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে নিলে প্রতিটি ছোট লক্ষ্য পূরণের সাথে সাথে আপনার মাঝে নতুন উদ্যম সৃষ্টি হবে।
ম্যারাথন দৌড় হয় ২৬ মাইলের। কিন্তু আপনি যদি একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ হতে চান, এবং যদি প্রথমেই ২৬ মাইল দৌড়ানোর চেষ্টা করেন, তবে আপনার ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ২৬ মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা অর্জনের জন্য আপনাকে প্রথমে ১ মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এরপর যখন এটা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে, আপনি ২ মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা অর্জনের আত্মবিশ্বাস পাবেন। এভাবে ধীরে ধীরে একটানা ২৬ মাইল দৌড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করবেন।
১০ বছরের লক্ষ্যকে এক বছর, এক বছর কে ১২ মাস এবং ১২ মাসকে ৫২ সপ্তাহ – এভাবে প্রতিটি দিনের লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করুন। দেখবেন প্রতিদিনই আপনি অনুপ্রাণিত থাকছেন।
একটি বড় লক্ষ্যকে যখন আপনি ছোট ছোট পরিকল্পনা বা ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করবেন – তখন আপনি নিজেই নিজের ভবিষ্যত্ সাফল্য পরিস্কার দেখতে পাবেন। সেইসাথে, লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুপ্রেরণারও কোনও অভাব হবে না।
ধৈর্য
আপনি বড়লোক হতে চান, অথবা অন্য যে কোনও বড় লক্ষ্যই অর্জন করতে চান – ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। পৃথিবীর প্রায় সব সফল মানুষ ধৈর্য নিয়ে উক্তি করেছেন। কারণ, তাঁদের সাফল্যের পেছনে ধৈর্যের অনেক বড় অবদান ছিল।
বিল গেটস একবার বলেছিলেন, তাঁর রাতারাতি সাফল্যের পেছনে ছিল ১০ বছরের ধৈর্য আর পরিশ্রম। ১০টি বছর তাঁর কাছে দেখানোর মত কিছু ছিল না। কিন্তু তাঁর আকাঙ্খা ছিল, তিনি একদিন বিরাট কিছু করে দেখাবেন। তাই বার বার ব্যর্থ হয়েও তিনি চেষ্টা করে গেছেন। তিনি যদি ৯ম বছরে ধৈর্য আর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতেন, তবে আজ প্রযুক্তি জগতে বিপ্লব ঘটাতে পারতেন না।
টমাস আলভা এডিসন কার্যকর বৈদ্যুতিক বাতি বানানোর আগে ১০ হাজার বার ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্য হারাননি, এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হয়েছিলেন।
সফল মানুষের ব্যর্থতার গল্প লেখাটিতে আমরা কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা কনোনেল স্যান্ডার্স এর কথা বলেছিলাম। ৬০ বছরের বেশি বয়সে যখন তাঁর সব শেষ হয়ে গিয়েছিল, তিনি ঠিক করেছিলেন তাঁর নিজের বানানো চিকেন ফ্রাই এর রেসিপি দিয়ে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। নিজের রেস্টুরেন্ট দেয়ার মত টাকা তাঁর হাতে ছিল না। নিজের শেষ রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার পর তাঁর হাতে মাত্র ১৬৫ ডলার ছিল। তিনি একটার পর একটা রেস্টুরেন্টে গিলে বলেছিলেন, “আমার কাছে দারুন একটি রেসিপি আছে। এটার জন্য আমাকে তোমাদের কোনও টাকা দিতে হবে না; শুধু লাভ হলে তার থেকে কিছু দিলেই চলবে। ” – রেস্টুরেন্টগুলো তাঁর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে লাগলো। তিনি কয়টি রেস্টুরেন্ট তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে – তার হিসাব রাখতে শুরু করলেন। এক এক করে ১০০৯টি রেস্টুরেন্ট তাঁকে ফিরিয়ে দেয়; অবশেষে ১০১০ নম্বর রেস্টুরেন্টের দরজায় কড়া নাড়ার পর তারা তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়। আজ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও লাভজনক রেস্টুরেন্ট চেইনের একটি কেএফসি।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী লেখিকা জে কে রাউলিং এর জীবনী থেকে জানা যায়, তাঁর হ্যারি পটার সিরিজটি প্রকাশিত হওয়ার আগে ১২টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাকে ফিরিয়ে দেয়। সবাই বলেছিল, এই গল্প চলবে না। কিন্তু রাউলিং ধৈর্য ধরে চেষ্টা করে গেছেন। এবং শেষ পর্যন্ত একটি ছোট প্রকাশনী থেকে হ্যারি পটার প্রকাশ হওয়ার পর তা বিশ্ব সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
পৃথিবীর প্রতিটি সফল মানুষের গল্পই এমন। দূর থেকে দেখে মনে হয় মানুষটি রাতারাতি সফল হয়েছেন, কিন্তু এর প্রতিটির পেছনেই আছে ধৈর্য ধরে দিনের পর দিন কষ্ট করার ইতিহাস। নেপোলিয়ন হিলের মতে, বড়লোক হওয়ার প্রধান উপায়ই হল আকাঙ্খা ও বিশ্বাসের পাশাপাশি আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। যত দিনই যাক, যত বছরই যাক – ধৈর্য না হারালে একদিন না একদিন আপনার আশা পূর্ণ হবেই।
ভালো সঙ্গ
বইয়ের এই পর্যায়ে নেপোলিয়ন হিল এমন মানুষের সাথে চলার কথা বলেছেন, যারা আপনাকে বড় হওয়ার পথে সাহায্য করতে পারবে। এখানে তিনি বলেননি যে, তাদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিন। আমরা যে ৫ জন মানুষের সাথে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই – তাদের মিলিয়েই আমাদের স্বভাব গড়ে ওঠে। আপনি যদি ৫জন সফল ব্যবসায়ীর সাথে বেশিরভাগ সময় কাটান, তবে ব্যবসা সম্পর্কে এমনিতেই আপনার জ্ঞান ও সেন্স বাড়বে। ৫জন ডাক্তারের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটালে চিকিত্সা বিষয়ে এমনিতেই আপনার ভালো জ্ঞান হবে। অন্যদিকে আপনি যদি হতাশ ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটান – তবে একটা সময়ে আপনিও তাদের মত হয়ে যাবেন।
নেপোলিয়ন হিল এই প্রক্রিয়াকে “মাস্টার মাইন্ড” বলেছেন। ধনী হতে হলে আপনাকে এমন মানুষের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটাতে হবে – যারা ইতোমধ্যে ধনী, অথবা ধনী হতে চায়। এমন মানুষের সাথে আপনি যত বেশি সময় কাটাবেন – বড়লোক হওয়ার উপায় নিয়ে তত বেশি চর্চার মধ্যে থাকবেন।
থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ এর মূল বিষয়টাই হল নিজের মধ্যে ধনী হওয়ার চিন্তা ও আগ্রহকে শক্তিশালী করা। এই চিন্তা যত শক্তিশালী হবে – আপনার পক্ষে সত্যিকার ধনী বা সফল হওয়া ততই সহজ হবে। ৮০/২০ প্রিন্সিপাল অনুযায়ী, মানুষের সাফল্য বা ব্যর্থতার ৮০% নির্ভর করে তার চিন্তা ও মানসিকতার ওপর।
লেখক বলেন, মাস্টার মাইন্ড পদ্ধতি সবচেয়ে উপকারী হয় তখন, যখন আপনি আপনার মত মানসিকতার ৩জন, ৫জন, বা ৭জন মানুষকে এক করে নিয়মিত আপনাদের লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করবেন। এতে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারবেন, এবং মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকতে পারবেন। ৩ জন ৩০ বছর বয়সী মানুষ এক হওয়া মানে সেখানে ৯০ বছরের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান এক হওয়া। সবাই সবার কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখতে পারবে। আপনি যা-ই করতে চান না কেন, সমমনা ও অভিজ্ঞ কিছু মানুষকে এক করার চেষ্টা করুন, এবং নিয়মিত তাদের সাথে আলোচনা করুন। প্রতি সপ্তাহে যদি এটা করতে পারেন, তবে এক সপ্তাহে অন্যরা যা যা শিখেছে – সেই জ্ঞান আপনি নিতে পারবেন, এবং সেইসাথে, আপনি নিজে যা শিখেছেন – তা নিয়েও আলোচনা করতে পারবেন।
এভাবে গ্রুপ করতে না পারলেও সব সময়ে চেষ্টা করুন ইতিবাচক ও সফল মানুষের সাথে চলতে। হতাশ ও নেতিবাচক মানুষদের যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। সফল হওয়ার মানসিকতা গড়তে এটা খুবই কার্যকর।
নিজেকে সময় দেয়া
সফল হওয়ার জন্য যেমন অন্যদের সাথে ভালো যোগাযোগের দরকার, তেমনি সম্পূর্ণ নিজেকে সময় দেয়াও দরকার। নিজের জীবন, লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে গভীর চিন্তা ও চর্চার জন্য নিজের জন্য সময় রাখতে হবে। লেখক একে বলেছেন “নিজেকে একঘেয়ে করে ফেলা”। সপ্তাহে বা মাসে একটা দিন যদি আপনি পুরো দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন – এবং কোনও কাজও না করেন – তাহলেই দিনের একটা পর্যায়ে আপনি নিজেকে নিয়ে সেই গভীর চিন্তায় ডুবে যেতে পারবেন।
পোষা প্রাণী, বই, ইন্টারনেট – সবকিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কিছু না করতে করতে একটা সময়ে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে চিন্তা আপনার মাথায় আসতে শুরু করবে। অগোছালো চিন্তাগুলোও এক সময়ে শেষ হবে। তারপর আপনার একঘেয়ে লাগতে শুরু করবে – এবং তারপর আপনার মাথায় নিজেকে নিয়ে এবং নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা আসতে শুরু করবে।
আপনি এখন ঠিক কোন অবস্থায় আছেন, কোন অবস্থায় যেতে চান, এবং সেই অবস্থায় যেতে হলে আপনাকে কি কি করতে হবে – এইসব চিন্তা খুব পরিস্কার হয়ে আপনার সামনে চলে আসবে। এভাবে নিয়মিত একা থাকার অভ্যাস করলে, আপনি নিজেই নিজের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা নিয়ে পরিস্কার ধারণা পেতে থাকবেন।
আজকালকার দিনে সোশ্যাল মিডিয়া, ফোন – ইত্যাদির কারণে নিজেকে সময় দেয়াটা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজের জীবন ও লক্ষ্য সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাওয়ার জন্য এগুলো থেকে তো দূরে থাকবেনই। এমনকি বই পড়ার উপকারিতা ভুলে যাবেন; মানে বইও পড়বেন না। সময় কাটানোর মত কিছু যেন আপনার কাছে না থাকে – একমাত্র নিজের চিন্তাই যেন হয় আপনার সময় কাটানোর একমাত্র মাধ্যম। চাইলে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন – তবে অবশ্যই একা একা যেতে হবে। – এই ব্যাপারটা কিছুদিন চর্চা করলেই দেখবেন কত পরিস্কার ভাবে আপনি চিন্তা করতে পারছেন। আগে হয়তো ভাবতেও পারেননি যে আপনি এত সুন্দর গুছিয়ে চিন্তা করতে পারেন!
১নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন, এবং তার জন্য জীবন উত্সর্গ করুন
ধনী বা সফল হতে হলে আপনার একটি মাত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতে হবে, এবং সেই লক্ষ্যের পেছনেই নিজের পুরোটা দিয়ে ছুটতে হবে। পুরো আলোচনাটির মূল কথা আসলে এটাই। আপনি যখন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করতে পারবেন – তখন এই লক্ষ্যের পেছনে বাকি সব নীতি বা উপায় গুলো প্রয়োগ করতে পারবেন।
নিজের জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য আগের পয়েন্টে বলা পদ্ধতিটি খুবই কার্যকর। এছাড়া জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ সঠিক ভাবে করার উপায়: “সাকসেস প্রিন্সিপালস” – (বুক রিভিউ) লেখাটিও আপনার উপকারে আসবে।
একবার লক্ষ্য ঠিক হয়ে গেলে, কোনও অবস্থাতেই লক্ষ্যকে বদলাবেন না। যদি পরিস্থিতি বিচার করে মনে হয়, লক্ষ্যটি পূরণ করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে লক্ষ্য না বদলে কৌশল বদলানোর চিন্তা করুন। এই কথা কখনও মনে আনবেন না যে, আপনি লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন না। এই মূহুর্তে হয়তো লক্ষ্য পূরণ করার ক্ষমতা আপনার নেই – কিন্তু একের পর এক উপায় চেষ্টা করে গেলে সঠিক উপায় একদিন অবশ্যই জানতে পারবেন। নেপোলিয়ন হিল বলেন, “যখন সফলতা আসতে শুরু করবে, তখন এত দ্রুত আপনার উন্নতি হতে থাকবে যে, আপনার মনে হবে কেউ যেন জাদু করছে”।
কিন্তু এটা আসলে কোনও জাদু নয়, লক্ষের পেছনে ছুটতে ছুটতে আপনি আসলে বড়লোক বা সফল হওয়ার গোপন উপায়টি নিজের অজান্তেই আবিষ্কার করে ফেলেছেন।!
পরিশিষ্ট
বড়লোক হওয়ার উপায় বা সফল হওয়ার উপায় আসলে গোপন কিছু নয়। আপনার আমার সামনেই সেই উপায়গুলো আছে – কিন্তু সেগুলো এতই সাধারণ যে, আমাদের অনেক সময়ে বিশ্বাসই হয় না এগুলো ব্যবহার করেই মানুষ এত সফল হয়েছে।
প্রতিটি মানুষের সাফল্যের সূত্র হয়তো আলাদা, তাদের যাত্রা আলাদা – কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে কিছু বিষয় সবার সাথেই ঘটে। কিছু উপায় সবাই অবলম্বন করে। হয়তো খালি চোখে সেগুলো ধরা যায় না – তাই আমাদের কাছে এগুলো আশ্চর্য মনে হয়। নেপোলিয়ন হিল সেই আশ্চর্য সাধারণ উপায়গুলোই ২০ বছর ধরে দুই মলাটে বন্দী করেছেন, ৫০০ জনের বেশি সফল মানুষের ওপর গবেষণা করে। বইয়ের ভূমিকায় লেখক বলেছেন, এ্যান্ড্রু কার্নেগী স্বয়ং তাঁকে এই বইটি লিখতে বলেছিলেন, যাতে মানুষ সফল ও ধনী হওয়ার একটি সহজ দিক নির্দেশনা পায়। নেপোলিয়ন হিলের ছেলে কানে শুনতে পেতেন না। বাবা যখন বইটি লিখছিলেন, তিনি অসমাপ্ত বইয়ের কিছু অংশ পড়ে সেগুলো নিজের জীবনে কাজে লাগান – এবং দারুন সফল ও ধনী হয়ে ওঠেন।
আপনিও চাইলে এই বইয়ের সাধারণ, কিন্তু কার্যকর উপায় গুলো নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারেন। আর সেই পথে এই বুক রিভিউ যদি আপনাকে একটুও সাহায্য করে – তবে আমরা ধন্য।