অফবিট

বিশেষ: খাবার থাকে শূন্যে ভেসে, নভোচারীরা মহাকাশে কিভাবে তাদের খাবার খান?

মহাকাশে খাবার ভেসে বেড়ায়! তাহলে নভোচারীরা কীভাবে খাবার খেয়ে থাকেন? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রশ্নটি আবার নতুন করে এসেছে, তার কারণ হলো নাসা ২০২৫ সালে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর জন্য নতুন স্পেসস্যুটের ডিজাইন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। এরপর মহাকাশ অভিযান আবার আলোচনায় আসে। মহাকাশে নভোচারীরা কী খান, মাধ্যাকর্ষণের অভাবে ভেসে বেড়ানো খাবার কীভাবে মুখে তোলেন, মহাকাশে নভোচারীরা কেমন জীবন কাটান, এসব নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।

আমেরিকার নভোচারীরা বর্তমানে মহাকাশ অভিযানের জন্য যে পোশাক পরেন, ১৯৮১ সালের পর নতুন করে পুরোপুরি তার ডিজাইন আর বদল করা হয়নি। এখন নতুন স্পেসস্যুটের যে ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, তা নারী নভোচারীদেরও পরতে সুবিধা হবে বলে বলা হচ্ছে। এ পোশাক যদি ছাড়পত্র পেয়ে যায়, তাহলে আর্টেমিস থ্রি মহাকাশ মিশনে নভোচারীরা যাবেন এ পোশাক পরেই।

পিত্‍জার কথা মনে হতো তার: নভোচারী নিকোল স্টট বলেন, সারাক্ষণ পিত্‍জার কথা ভাবতাম, দেখুন, পিত্‍জা মানেই ময়দার তৈরি রুটির বেসের ওপরে বেশ ঝুরঝুরে রুটির কিছু অংশ, যা চিবাতে মজা, সেইসঙ্গে ওপরে গলা পনির আর গরম সস! কিন্তু মহাকাশে খাবার তৈরি করতে হয় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা মাথায় রেখে। অর্থাত্‍ সেখানে রুটি থাকবে না, রুটির গুঁড়া থাকবে না, থাকলে রুটির গুঁড়া তো বাতাসে ভেসে বেড়াবে। সুতরাং পিত্‍জা হবে নরম ময়দার বেস দিয়ে। প্রাতঃরাশে অবশ্য বিশেষভাবে তৈরি ডিম খাওয়া যায়, ছোট সাইজের ডিম ভাজা বা ওমলেটও দেওয়া হয়। মহাকাশে নভোচারীরা প্রায়ই স্কুলের বাচ্চাদের মতো এ ওর খাবারে ভাগ বসান। লাঞ্চে আমাদের দেওয়া হত স্যুপ। আর অন্য কিছু খাবার। তবে সব কিছু মোড়া থাকত ময়দার পাতলা রুটি দিয়ে। আর রাতে জাপানি কারি, যা খুবই সুস্বাদু আর আমার খুব পছন্দের।

ভাসমান খাবার: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কোনো থালা বাটি ব্যবহার করা যায় না, কারণ সেখানে সবই শূন্যে ভেসে বেড়ায়। নভোচারীরা যেসব খাবার খায়, তা খুবই প্রক্রিয়াজাত এবং খাবারের ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে সব জল শুষে বের করে নেয়া হয়। এরপর নভোচারীরা খাবার আগে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাতে গরম বা ঠাণ্ডা জল মিশিয়ে নরম করে নেয়। সব খাবার প্যাকেট করা থাকে, নভোচারীদের সেই প্যাকেট থালা হিসাবে ব্যবহার করতে হয় আর খাওয়ার জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ চামচ। সেই চামচে হাতল থাকে খুব লম্বা। লম্বা হাতল দিয়ে প্যাকেটের ভেতর থেকে ভাত টেনে বের করে কারির ওপর রাখতে হয়। তবে তার জন্য বেশ কসরত্‍ করতে হয়। ভাতের সঙ্গে কারি মেশাতে গেলে কারির ফোঁটাগুলো ভেসে বেড়ায়। কিন্তু ভেসে বেড়ানো খাবার খাওয়া তো কঠিন।

নিকোল স্টট যেভাবে খাওয়াটা রপ্ত করেছিলেন: ভাসমান খাবার খাওয়া কিন্তু বেশ মজার ব্যাপার। তারা চামচে খাবার নিয়ে একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিতেন কিংবা চামচে করে খাবার শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে তা মুখের ভেতর লুফে নিতেন।

মহাকাশে জল: মহাকাশে নিজের শরীরকে আর্দ্র রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু মহাকাশে জল আসবে কোথা থেকে? নভোচারীরা পৃথিবী থেকে অবশ্যই কিছু জল সঙ্গে নিয়ে যান। আর বাকিটা আসে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা জল থেকে। মহাকাশযানের জ্বালানি কক্ষ থেকে, বাতাসের আর্দ্রতা থেকে এমনকি প্রস্রাব থেকেও আবার ব্যবহারযোগ্য জল তৈরি করা হয়। শুনলে হয়ত নাক সিঁটকাতে ইচ্ছা হবে, কিন্তু নাসা দাবি করছে এই রিসাইকেল করা জল আমরা পৃথিবীতে যে জল খাই তার থেকেও অনেক পরিষ্কার।

নাসার প্রধান পুষ্টিবিদ স্কট স্মিথ বলেছেন, নভোচারীদের খাদ্য গ্রহণ এবং তাদের পুষ্টির বিষয়টা অবশ্যই কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ। মহাকাশ ভ্রমণ নভোচারীর শরীরে যে বড়ধরনের প্রভাব ফেলে তা মোকাবিলা করতে তাদের পুষ্টিযুক্ত খাবারের ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। আমরা জানি ফ্লাইটে মানুষের ওজন কমে যায়। আমরা জানি পৃথিবীতে খাবার খেলে সেটা পেটে যেভাবে স্থায়ী হয়, অর্থাত্‍ পেট ভরার যে অনুভূতিটা হয়, মহাকাশে সেটা হয় না। তারা বুঝতে পারে না কতটা খেয়েছে বা পেট কতটা ভরেছে। তাই নভোচারীদের আইপ্যাড অ্যাপ দেওয়া হয় যাতে তারা কী খাচ্ছে, কী পরিমাণ খাচ্ছে তার হিসাব রাখতে পারে।

তিনি আরো বলেন, যখনই কোনো মহাকাশযান স্পেস স্টেশনে যায়, আমরা ছোট প্যাকেট করে তাজা ফল, সবজি, কমলা, আপেল, বেরি জাতীয় ফল এসব পাঠাই। সেগুলো বেশিদিন তাজা থাকে না। কিন্তু সেগুলো হাতে পেলে নভোচারীরা মানসিকভাবে ভালো বোধ করেন।

নভোচারী স্মিথ বলেছেন, নভোচারীরা ভালোই খাবার-দাবার পান। আমার মনে পড়ে না মহাকাশে খাবার নিয়ে আমি কখনো মন খারাপ করেছি। নভোচারীরাও তাদের পরিবারের কাছ থেকে ওয়াইন, বিশেষ মাছ পেয়ে থাকেন। এসব তারা ভাগাভাগি করে খান। আর নভোচারীরা যদি কোনো একটা খাবার বিশেষভাবে খেতে চান, সেটা মিস করেন, তারা ফেরত আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সেই খাবার দেবার ব্যবস্থা করা হয়।

উল্লেখ্য, রুশ নভোচারী আলেক্সি অভচিনিন ২০১৬ সালে মহাকাশ অভিযান শেষ করে পৃথিবীতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে তরমুজ খেতে দেওয়া হয়েছিল। নাসা আগামীতে মহাকাশ অভিযানে নতুন খাবারের প্যাকেজ উদ্ভাবনের জন্য যৌথভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে কানাডার মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে।

Back to top button