অফবিটঅর্থনীতি

বিশেষ: কম বয়সে ধনী হওয়ার সেরা উপায়, জেনেনিন বইটির গুরুত্ত্বপূর্ন কিছু তথ্য (২য় পর্ব)

প্রথমেই বলে রাখি, এটি কোনও সস্তা দরের ইনফোমার্শাল বুক নয়, যেগুলো আপনাকে ৩০ দিনে/১ বছরে ধনী হওয়ার উপায় বলবে। এই বইটির লেখক নিজে ৩১ বছর বয়সে মিলিওনেয়ার হয়েছেন – কিন্তু তা হতে তাঁকে বহুদিন পরিশ্রম করতে হয়েছে আর বুদ্ধি খাটাতে হয়েছে – কিন্তু তিনি বুড়ো হওয়ার আগে মিলিওনেয়ার হতে পেরেছেন।

বেশিরভাগ মানুষই যেখানে বহু বছর পরিশ্রম করে টাকা জমিয়ে জমিয়ে শেষ বয়সে ধনী হয়ে আরামে জীবন কাটানোর পরিকল্পনা করে – লেখক সেখানে তরুণ বয়সেই ধনী হয়ে সেই ধন উপভোগ করার পদ্ধতি দেখাতে চেয়েছেন। বুক রিভিউটি পড়তে পড়তে আপনি এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বুক রিভিউটি বেশ দীর্ঘ কারণ, আমরা এই বইয়ের শিক্ষনীয় ব্যাপারগুলো যতটা সম্ভব বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, যাতে মূল বইটি না পড়েও আপনি এর আইডিয়াগুলো যথেষ্ঠ ভালো করে আত্মস্থ করতে পারেন।

দি মিলিয়নেয়ার ফাস্টলেন এর লেখক:
দি মিলিওনেয়ার ফাস্টলেন এম জে ডিমার্কো এর লেখা একটি বেস্ট সেলিং ফাইনানশিয়াল সাকসেস বিষয়ক বই। লেখক ছাড়াও ডিমার্কোর আরও একটি পরিচয় – তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। বেশ কয়েকটি সফল ব্যবসা তাঁর হাত ধরে গড়ে উঠেছে। তিনি limos.com এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সিইও।এই কোম্পানীটি তিনি মোট দুইবার বিক্রী করেন। প্রথমবার বিক্রী করার পর ক্রেতারা সেটি খুব ভালো মত চালাতে পারেনি। তিনি কম দামে আবার সেটি কেনেন। তারপর আবার বিশাল লাভে বিক্রী করেন। ২৬ বছর বয়সেও মায়ের সাথে বাস করা ডিমার্কো মাত্র ৩৩ বছর বয়সে মাল্টি মিলিওনেয়ার হয়ে যান।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল তিনি একটি ল্যাম্বারগিনির মালিক হবেন। এবং তিনি কম বয়সেই বুঝতে পেরেছিলেন, ল্যাম্বরগিনির মালিক হতে হলে তাঁকে ব্যবসা করতে হবে। চাকরি করে এই জিনিসের মালিক হতে গেলে তাঁকে বুড়ো হয়ে যেতে হবে, যে বয়সে গাড়ির স্পিড তোলার মত জোশ আর তাঁর মাঝে থাকবে না।
চলার জন্য তাঁকে অবশ্য বেশ কিছু ছোট ছোট চাকরি করতে হয়েছে। এর মধ্যে একটা ছিল লিমুজিন গাড়ি চালানো। লিমু কেনার সামর্থ্য খুব কম লোকেরই হয়। বেশিরভাগই ভাড়ায় চালিত। এরকম এক যাত্রী তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, নিউ ইয়র্ক সিটিতে লিমুজিন কিভাবে পাওয়া যায়? – এই প্রশ্ন থেকেই তাঁর মাথায় লিমু ডট কম এর আইডিয়া এসেছিল। যারা লিমু খুঁজছেন, এবং যাঁরা ভাড়া দিতে চাইছেন – তাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়ে মাঝখান থেকে মুনাফা অর্জন করাই ছিল যার উদ্দেশ্য। – নিশ্চই উবারের কথা আপনার মাথায় আসছে? – আসলে লিমু ডট কম এর শুরুটা হয়েছিল সেই ২০০৭ সালে।

যাই হোক, লিমুর পর ডিমার্কো একে একে আরও কয়েকটি ব্যবসার সাথে জড়িত হন, এবং রীতিমত ধনী হয়ে ওঠেন। ল্যাম্বরগিনির স্বপ্ন তো পূরণ হয়েছেই – সাথে আরও অনেক কিছুই হয়েছে। চাইলে তিনি সারাজীবনে আর কোনও কাজ না করেও পায়ের উপর পা তুলে কাটিয়ে দিতে পারবেন।

এত কম বয়সে তাঁর এই সাফল্য আসলেও এর পেছনে ছিল অনেক দিনের সাধনা ও পরিশ্রম। তাঁর অভিজ্ঞতা ও মাইন্ডসেট কাজে লাগিয়ে যেন অন্যরাও ৬০ বছরে ব্যাঙ্কে মোটা অংকের টাকা জমানোর বদলে, ৪০ এর আগেই ধনী হতে পারে – তাই তিনি দি মিলিওনেয়ার ফাস্টলেন বইটি লিখেছেন। প্রকাশের পর থেকেই বইটির বিক্রী দেখার মত।

পরবর্তী অনেক তরুণ মিলিওনেয়ারই তাঁর বই থেকে উপকার পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

মূল ধারণা:
কম বয়সে দ্রুত ধনী হওয়াই মূলত এই বইটির মূল কথা। তবে তিনি বার বার বলেছেন, কম বয়সে ধনী মানে রাতারাতি ধনী নয় – এর জন্য অবশ্যই আপনাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে।

লেখক কম বয়সে ধনী হওয়ার মাইন্ডসেট ও উপায় বলার পাশাপাশি তিনি আগের যুগের একটি জনপ্রিয় ধারণাকে বাতিল করেছেন। ধারণাটি হল: “পড়াশুনায় ভালো রেজাল্ড করো, ভালো একটি চাকরিতে কঠোর পরিশ্রম করো, টাকা জমাও, শেষ বয়সে আরাম করো”

এই পুরাতন ধারণা থেকে বের হয়ে এসে লেখক নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শেষ বয়সে আরাম করার বদলে, তরুণ বয়সেই মুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। সেইসাথে, তাঁর জিনের জন্য যেসব মাইন্ডসেট কার্যকর ভূমিকা রেখেছে – সেগুলো বইয়ে বর্ণনা করেছেন – যেন নতুনরা সেখান থেকে শিখে নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারে।

নিজের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন
লেখক বলেন, মিলিয়ন ডলারের গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইলে প্রথমে সেখানে যাওয়ার জন্য একটি ভালো গাড়ি দরকার। আপনি কি ভাবছেন? – লেখক গাড়ি কেনার কথা বলছেন? – মোটেই না! সেই গাড়িটি আসলে আপনি নিজে। একটি ভালো গাড়ি হওয়ার উপায় হল আপনি যা করতে চান – যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান, সেই বিষয়ে নিজে একজন সেরা বিশেষজ্ঞ হতে হবে। শেখা ও চর্চার কোনও বিকল্প নেই।

তবে তার আগে আপনাকে দৃঢ় ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি নিজের বেতন নিজে দেবেন। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর চিন্তা করুন, কিভাবে তা দেবেন? – কোন জিনিসটা আপনি সবচেয়ে ভালো পারবেন? – সেই জিনিসটা যত ভালোভাবে পারা যায়, শেখার চেষ্টা করুন।

লেখক বলেন, আপনার জীবন কেমন হবে, তা আপনার সিদ্ধান্তের ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। যত তাড়াতাড়ি ফাস্ট লেনার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন – তত তাড়াতাড়ি আপনার কাছে ফাস্ট লেনার হওয়ার পথ পরিস্কার হয়ে যাবে। গরিব হয়ে জন্মানো নয়, গরিবের মত চিন্তা করা ও সিদ্ধান্ত নেয়াই অভাব ও দারিদ্রের প্রধান কারণ।

ধরুন, দুইজন মানুষ ১০০ বছরের আয়ু নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে, একজন ৫০ বছর বয়সে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিল সে হিমালয় দেখবে। তারপর পথ চলা শুরু করল। আরেকজন ২০ বছর বয়সে একই সিদ্ধান্ত নিয়ে পথ চলা শুরু করল। এখানে হিমালয় দেখা যদি হয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন – তাহলে কে বেশি লাভবান?

লেখকের মতে, সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় আশির্বাদ গুলোর একটি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই এটার সঠিক ব্যবহার করতে পারে না। ফাস্ট লেনার হওয়ার সব যোগ্যতা থাকার পরও বেশিরভাগ মানুষ সিদ্ধান্তের কারণে স্লো লেনার বা সাইডওয়াকার হয়ে জীবন কাটায়। শুধুমাত্র চিন্তার ধরন বদলে একজন মানুষ তার জীবনকে ভালোর দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ধরুন আপনার একটি গাড়ির প্রয়োজন, ১০ লাখ টাকার গাড়ি যে কাজ করে, ৫০ লাখ টাকার গাড়িও সেই কাজ করবে। এখন আপনি যদি লোন নিয়ে ৫০ লাখ টাকার গাড়িটি কেনেন, তবে আপনাকে সেই লোন শোধ করতে হবে।- অর্থা‌ত্‍, সেই টাকাটি আপনাকে আয় করতে হবে। ১০ লাখ টাকার গাড়ির জন্যও লোন শোধ করতে হবে। এখানে যদি আপনি লাক্সারির চেয়ে প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেন তাহলে ১০ লাখ টাকার গাড়িটি কেনার সিদ্ধান্ত নেবেন। শুধুমাত্র একটি বি.এম.ডব্লু লোগোর জন্য ৪০ লাখ টাকা বেশি খরচ করবেন – যে টাকাটি আপনি অন্য কাজে লাগাতে পারতেন? – ফাস্ট লেনার হলে আপনি কখনওই এই সিদ্ধান্ত নেবেন না।

বরং হিসেব করে যখন দেখবেন ৫০ লাখ টাকা ইনকাম করার ক্ষমতা আপনার আছে – তখন আপনি প্রয়োজন মেটানোর জন্য ১০ লাখ টাকার গাড়ি কিনবেন এবং বাকি ৪০ লাখ টাকা এমন কোথাও বিনিয়োগ করবেন – যেখান থেকে আপনার আরও টাকা আসে। তাছাড়া এই টাকা আয় করতে যে সময় খরচ হবে – সেই সময়ের মূল্য একটি লোগোর চেয়ে বেশি।

আর্থিক ভিত গড়ার সময়ে নিজের সময়ের মূল্য দেয়ার ব্যাপারে এম জে লিখেছেন, “যদি কেউ অনলাইনে গেম খেলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করে – তবে সে কোনওদিনই খুব বেশি আর্থিক সাফল্য পাবে না। আমার টিভি দেখার দরকার নেই, কারণ আমি এমন একটি জীবন গড়তে সময় দিচ্ছি – যা এর চেয়েও অনেক আনন্দময়। সেই ভবিষ্য‌ত্‍ দেখতে পাওয়া মঙ্গলবার রাত আটটায় প্রচারিত কল্পকাহিনীর চেয়ে অনেক বেশি উপভোগ্য।

স্লো লেনাররা যেমন টাকার ব্যাপারে খুঁতখুঁতে, ফাস্ট লেনাররা সময়ের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে।

৭ম ভাগ: অর্থের পথ
এই অংশে দ্রুত ও স্থায়ী ভাবে সম্পদশালী হওয়ার জন্য কিভাবে ব্যবসা করতে হবে – তার বর্ণনা দিয়েছেন।

এখানে তিনি ফাস্টলেন ব্যবসার ৫টি মূল নীতির বর্ণনা দিয়েছেন। আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে সেগুলো তুলে ধরছি।

০১. শুধু টাকার জন্য ব্যবসা নয়
লেখক বলেন, শুধুমাত্র টাকা আয়ের জন্য কোনও ব্যবসা শুরু করবেন না। ফাস্ট লেনার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়েই ভেবে দেখুন – কোন কাজটা আপনি করতে চান, এবং কি করতে সবচেয়ে ভালোবাসেন। সেটাই নিজের ব্যবসার বিষয় বানিয়ে ফেলুন।

লেখক আরও বলেন, ক্রেতারা যদি একবার টের পায় যে একটি ব্যবসার একমাত্র উদ্দেশ্য মালিককে বড়লোক বানানো – তাহলে সেই ব্যবসা আর বেশিদিন টিঁকবে না। ব্যবসা হতে হবে এমন – যেটি মানুষের কোনও একটি সমস্যার সত্যিকার সমাধান করে। এমনকি যদি আপনি আপনার ভালোলাগার কাজটিকে ব্যবসায় পরিনত করেন – তখনও যেন এটি মানুষের সমস্যার সমাধান করে। মানুষের কাজে না লাগলে আপনার পন্য বা সেবা তারা কেন নেবে?

০২.কঠিন শুরু

যে ব্যবসা শুরু করা যত কঠিন, সেই ব্যবসা করে ধনী হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। আর যারা এই নীতির বাইরে থেকেও খুব ভালো ব্যবসা করতে পারেন, তাঁরা অবশ্যই তাঁদের কাজে সেরাদের সেরা।

উদাহরণ হিসেবে ই-কমার্স এর কথা ধরা যাক। সাধারণ ভোক্তাদের জন্য জেফ বেজোস প্রথমে আমাজন শুরু করেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য আলিবাবা ডট কম শুরু করেন জ্যাক মা। তাঁরা যখন শুরু করেছিলেন তখন এই ব্যবসা শুরু করা ছিল দারুন কঠিন। ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইটের এত ব্যপক প্রচলন ছিল না। আর মানুষের কাছেও ই-কমার্স এর ধারণাটি ছিল প্রায় অজানা। কিন্তু এই কঠিন কাজ সম্ভব করেই তাঁরা আজ পৃথিবীর সেরা দুই ধনী ব্যক্তি।

কিন্তু এখন ই-কমার্স সবাই বোঝে। ওয়েবসাইট বানানো, বা ব্যবসায়ীদের দিয়ে পন্য আপলোড করানোও কঠিন কিছু না। কিন্তু এখন আর এই ধরনের সাইট খুলে বিলিওনেয়ার হওয়া প্রায় অসম্ভব। পে-পাল এর সহ প্রতিষ্ঠাতা পিটার থেইল এর জিরো টু ওয়ান বই এর মেথড ব্যবহার করে তাই নতুন কিছু শুরু করে কঠিন পথ পাড়ি দেয়াই ব্যবসা করে ধনী হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়। আর ই-কমার্স এর মত প্রচলিত কিছুতে সফল হতে চাইলে একদম টপ লেভেলের কিছু নিয়ে আসতে হবে – না হলে বাদ দেয়াই ভালো।

০৩.পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ

ফাস্ট লেনার উদ্যোক্তা হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত হল, আপনার ব্যবসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে থাকবে। আপনার পুঁজি দিয়ে যদি আপনি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের ফ্রাঞ্চাইজি / শাখা নেন – তবে সেটা খুব ভালো কিছু হবে না। অনেক সময়ে তারা নিজেরাই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে – যার ফলে আপনি পথে বসে যাবেন। ওয়ালমার্ট এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটন এর ক্ষেত্রে প্রথমে এমনটাই হয়েছিল। যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি নিজের ব্যবসা খোলেন। এখন তাঁর কোম্পানীর ফ্রাঞ্চাইজিই সবচেয়ে বেশি।

আপনার ব্যবসার ব্যাপারে বড় পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার চেয়ে যদি অন্য কারও বেশি থাকে, তবে সেটা কখনওই ফাস্টলেন ব্যবসা নয়।

০৪. ব্যাপ্তি

ব্যবসার বেশ কয়েক ধরনের ব্যাপ্তি রয়েছে। পাড়া/মহল্লা, গ্রাম, শহর, বিভাগ, দেশ, আন্তর্জাতিক – এই কয়েকটি ব্যাপ্তিতে একটি ব্যবসা ছড়াতে পারে। (ইলন মাস্ক এটাকে মহাকাশেও নিতে চাইছেন) – একটি ব্যবসার ব্যাপ্তি যত বড়, এর ইনকামও তত বেশি। রতন টাটা যে তাঁর টাটা গ্রুপকে এত বড় কোম্পানী বানিয়েছেন – তার পেছনে এর ব্যাপ্তি বাড়ানোর একটি বড় ভূমিকা ছিল।

ব্যবসা শুরুর আগে খুব ভালো করে এ্যানালাইসিস করুন যে, এই ব্যবসাটির ব্যাপ্তি কতদূর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে? – স্থানীয়, জাতীয়, বা আন্তর্জাতিক – কোন পর্যায়ে এর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে? – কিভাবে এটাকে সেই পর্যায়ে নেয়া যা? – এই ব্যাপারগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব দিন।

৫. অটোমেটিক
লেখক বলেন, ফাস্ট লেন ব্যবসা হতে হলে একটি ব্যবসাকে একটা সময়ে অবশ্যই স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক হতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করার পর যদি একটি ব্যবসা মূল উদ্যোক্তার উপস্থিতি ছাড়াই চলতে পারে – তবেই সেটা আদর্শ ফাস্টলেন ব্যবসা। অন্য কথায়, ‘money-tree’ বা টাকার গাছ। এই টাকা যদি সত্যিকার অর্থে উপভোগ করতে হয় – তবে অবশ্যই ব্যবসাটিকে অটোমেটেড হতে হবে।

একজন লেখকের একটি বই যদি বেস্ট সেলার হয় – তবে সেই বইয়ের রয়্যালিটি তিনি সারাজীবন পেয়ে যাবেন। তাঁকে আর সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। নতুন বই ছাপাতে হলে সেটা প্রকাশকের মাথাব্যাথা। লেখককে শুধু মাঝে মাঝে বইয়ের প্রচার করতে হবে। গেম অব থ্রোনস এর লেখক জর্জ মার্টিন বা হ্যারি পটারের লেখক জে কে রাউলিং এমন সুবিধা ভোগ করেন। আমাদের দেশে লেখালেখিকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে না দেখা হলেও, বাইরে একে খুব লাভজনক একটি ব্যবসা হিসেবে ধরা হয়। একটি বইয়ের পেছনে সময় ও শ্রম ব্যয় করার আগেই লেখক সেখান থেকে কত আয় হতে পারে – তার ছক করে নেন। যে সমস্যার সমাধান কেউ এখনও করেনি, তা সমাধান করে বিক্রী করা, নতুন পন্য বা সেবা আবিষ্কার করা, প্রচলিত পন্য বা সেবার উন্নতি করা – ইত্যাদি উদ্ভাবনী বিষয়গুলো অটোমেটিক ব্যবসার জন্য আদর্শ।

বিল গেটস যদি আর কোনওদিন মাইক্রোসফটের অফিসে না যান, তবুও তাঁর টাকা তাঁর একাউন্টে চলে আসবে। জেফ বেজোস, জ্যাক মা – এঁদের কথাও তাই। ওয়ারেন বাফেট তো বছরে একবার সিইওদের চিঠি পাঠিয়েই খালাস। ফাস্ট লেনার হতে আপনাকে এত বড় ব্যবসা করতে হবে না – আপনাকে শুধু সেই সিস্টেমটি দাঁড় করাতে হবে – যাতে আপনি না থাকলেও ব্যবসাটি খুব ভালোভাবে চলে। তাহলেই আপনি পুরো দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে পারবেন, বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারবেন।

৮ম ভাগ: ইভেন্ট ও প্রসেস এর পার্থক্য ও দ্রুত সম্পদ অর্জন
বইয়ের শেষ ভাগে এসে লেখক এম জে ডিমার্কো দ্রুত সম্পদ অর্জনের জন্য আইডিয়ার দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে কথা বলেছেন।

লেখকের মতে, কোনও একটি আইডিয়া মাথায় আসা একটি ইভেন্ট বা ঘটনা। অনেক মানুষের মাথায় অনেক সময়েই ভালো আইডিয়া আসে। কিন্তু তাদের মধ্যে খুব কম মানুষই সফল হয়। আইডিয়াকে কাজে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া হল প্রসেস। যারা দ্রুত প্রসেস শুরু করে তারাই দ্রুত সফল হয়। আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করলে, সেই পথে কিছু ভুল হয় – সেই ভুলগুলো ঠিক করতে করতে আইডিয়াটি পারফেক্ট রূপ নেয়। আর তখন থেকে ইনকাম আসতে শুরু করে – এবং ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেলে, উদ্যোক্তাকে আর ততটা পরিশ্রম করতে হয় না।

শেষ কথা: প্রতিযোগীতা নিজের সাথে
বেশিরভাগ ব্যবসায়ী একটি বড় ভুল করে। ক্রেতাদের দিকে নজর না দিয়ে তারা প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান আর লাভের অংকের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। ফাস্ট লেনাররা নিজের সাথে প্রতিযোগীতা করে। কাস্টোমাররা হয় তাদের সবচেয়ে বড় বস। কাস্টোমারদের খুশি করতে পারলে তারাই একটি ব্যবসাকে অনেক দূরে নিয়ে যায়।

তাই, ফাস্ট লেন ব্যবসার প্রধান গুরুত্ব হওয়া উচি‌ত্‍ পন্য ও সেবার মান উন্নয়ন – যাতে ক্রেতারা সন্তষ্ট থাকে। এটাই এক সময়ে একটি কোম্পানীকে বড় ব্র্যান্ডে পরিনত করে। বেশিরভাগ ব্যবসার প্রথম অবস্থায় বিজ্ঞাপন বা প্রচারের জন্য তেমন অর্থ থাকে না। সন্তষ্ট কাস্টোমাররাই এসব ব্যবসার সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর। তাই ব্যবসার প্রথম দিকে ক্রেতার সন্তষ্টি যত ভালো নিশ্চিত করা যাবে – ব্যবসা ততই দ্রুত বেড়ে উঠবে।

পরিশিষ্ট:
দি মিলিওনেয়ার ফাস্টলেন বইটি একদম শূণ্য থেকে শুরু করে কম বয়সেই স্থায়ী ভাবে ধনী হওয়ার উপায় বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি যথা সম্ভব বিস্তারিত ভাবে বইটির বিষয়বস্তু আপনার সামনে তুলে ধরার। সফল হওয়ার পথে যদি এই বুক রিভিউ আপনাকে একটু হলেও সাহায্য করে – তবেই আমাদের চেষ্টা সফল হবে।

Back to top button