অর্থনীতিটেক নিউজনিউজ

নিজে ছুটিতে গেলেও অ্যাপলের কর্মীদের স্বস্তি দিতেন না স্টিভ জবস, কিন্তু কেন?

বস ছুটিতে গেলে আর দশজন কর্মীর মতো টনি ফ্যাডেলও মনেমনে খুশিই হতেন। এরপর তিনি ২০০১ সালে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলে যোগ দিলেন এবং বুঝতে পারলেন, তার বস স্টিভ জবস অন্য সব বসদের চাইতে কতটা আলাদা!

সম্প্রতি ‘দ্য টিম ফেরিস শো’ নামক পডকাস্টে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন আইপড এর উদ্ভাবক ও আইফোন এর সহ-উদ্ভাবক, মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার টনি ফ্যাডেল।

সেখানে তিনি জানান, ছুটি কাটাতে গেলেও কর্মীদের স্বস্তি দিতেন না অ্যাপলের প্রয়াত সিইও স্টিভ জবস!
ফ্যাডেল জানান, স্টিভ জবস অবকাশ যাপনে গেলে প্রথম দুই-তিনদিন নির্বিঘ্নেই কাজ করতেন কর্মীরা। কিন্তু এরপর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই জবসের কল আসা শুরু হতো! একের পর এক কলের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন আইডিয়া শেয়ার করতেন তিনি।

অ্যাপলের আইপড বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্যাডেল বলেন, “ছুটিতে গেলেও জবস আপন মনে ভাবতেন. অ্যাপলের পরবর্তী পণ্যটি কী হবে, ভবিষ্যতে অ্যাপলকে কিভাবে আরো ভালোভাবে পরিচালনা করা যাবে, কিভাবে নতুন প্রযুক্তি যোগ করা যাবে।”
জবসের সাথে দীর্ঘ ১০ বছর কাজ করেছেন ফ্যাডেল। প্রয়াত বস সম্পর্কে তিনি বলেন, “জবস তার ছুটির দিনগুলোকে কাজে লাগাতেন অ্যাপলের দৈনন্দিন রুটিন থেকে বেরিয়ে ভিন্ন পরিবেশে চিন্তার উপায় হিসেবে।”

তিনি আরো জানান, জবস যখন ধরাবাঁধা কাজের দায়িত্বে থাকতেন না, সে সময় তিনি নতুন বই পড়তেন এবং আগামীতে কী কী প্রযুক্তি আসতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আলাপ করতেন। এর মাধ্যমে কখনো কখনো অপ্রত্যাশিতভাবেই কাজের অনুপ্রেরণা পেয়ে যেতেন তিনি! এমনকি অফিসের কাজে থাকাকালীনও সৃজনশীলতায় উত্‍সাহ যোগাতে একই কৌশল অবলম্বন করতেন তিনি।

লেখক ওয়াল্টার আইজ্যাকসন তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্টিভ জবস’-এ উল্লেখ করেছেন- “অনেকদূর হাঁটতে হাঁটতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা সারতে ভালোবাসতেন স্টিভ জবস।” এমনকি আইজ্যাক এও লিখেছেন যে, তার সাথে হাঁটতে হাঁটতেই আত্মজীবনী লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

কিন্তু জবসের ছুটি কাটানোর এসব অভিনব উপায় মেনে নেওয়া তার আশেপাশের মানুষদের জন্য ছিল এক চ্যালেঞ্জ! ফ্যাডেল জানান, অ্যাপলের কর্মীদের দিনে ৫-৬ বার ডাক পড়তো জবসের সামনে। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে কখনো বলতেন, ‘ঠিক আছে, চলো একটা মিউজিক কোম্পানি কিনে নেওয়া যাক’, আবার কখনো ‘এই পণ্যটা কেমন হবে, আমাদের কি এ ধরনের পণ্য বাজারে আনা উচিত?’ কিংবা ‘এটা বানাতে কোন প্রযুক্তি দরকার হবে?’ ইত্যাদি। স্টিভ জবসের সামনে আপনাকে হতে হবে গুগলের মতো, যে সবকিছু জানে!

তবে এসব ক্ষেত্রে কর্মীদের যা করতে হতো, তা হচ্ছে- দ্রুত গিয়ে খানিকটা গবেষণা করা এবং নিজের মতামত মেইল করে জবসকে পাঠানো। প্রায়ই দেখা যেত, মিনিট পনেরো পর জবস আবার নতুন একটা আইডিয়া নিয়ে তাকে ফিরতি কল করছেন।

তবে ফ্যাডেল মনে করেন, জবস কর্মীদেরকে যে গুরুত্ব দিতেন তার একটা অন্যরকম তাত্‍পর্য রয়েছে। এর মানে হচ্ছে, স্বয়ং স্টিভ জবসের সাথে বসে অ্যাপল পণ্যের জন্য ব্রেইনস্টর্মিং করা। কিন্তু এর ফলে যে চাপ তৈরি হতো কর্মীর উপর, সেটিও অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। তার উপর,অ্যাপলের কর্মীরা এমনিতেই প্রায়ই বেশ ‘হাই-প্রেশার’ প্রকল্পের কাজে ব্যস্ত থাকতেন।

অ্যাপল ছেড়ে দেওয়ার পর ফ্যাডেল গুগলের ‘নেস্ট ল্যাবস’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি জানান, স্টিভ জবসের কিছু ‘অবকাশকালীন অভ্যাস’ তার নিজের মধ্যেও গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- কয়েক ঘন্টার জন্য নিজের ডেস্ক থেকে উঠে বাইরে চক্কর দিয়ে আসা তার কাজের উত্‍পাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে এবং তাকে ব্যক্তিগতভাবে সুস্থ রেখেছে।

ফ্যাডেল বলেন, “কর্মক্ষেত্রে অসাধারণ পারফরমেন্স দেখানো, চমত্‍কার সব জিনিস সৃষ্টি করার অনেক রকম উপায় আছে। কিন্তু সেই সাথে প্রতিদিন এবং বছরেরও একটা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে এবং নিজস্ব চিন্তার বিকাশের জন্য সময় দিতে হবে। যখন আমি আমার মস্তিষ্ককে বাইরের অন্যসব কাজ থেকে মুক্তি দিতাম, তখন আমি চমত্‍কার সব আইডিয়া বের করতে পারতাম এবং অনেক সমস্যা সমাধান করতে পারতাম।

Back to top button