অর্থনীতি

বিশেষ: ইলন মাস্কের সফলতার রহস্য, জেনে নিয়ে অনুপ্রাণিত হন আপনিও

বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তার নাম জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিলই বটে। রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, টেসলা, পেপ্যালসহ আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। ইলন মাস্ক যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সফলতা পেয়েছেন।

শত বাঁধা বিপত্তির মুখোমুখি হয়েও তার লক্ষ্যে তিনি অবিচল ছিলেন, প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করে গেছেন দৃঢ়চেতা যোদ্ধার মতো।

ব্যর্থতায় দ্রুত হাল ছেড়ে দিয়ে পথ পরিবর্তন করেননি ইলন মাস্ক। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। যদি অপ্রতিরোধ্য কোন বাঁধা এসে তার পথ আগলে দাঁড়ায়, তিনি সেখানে মাথা গরম করে ঝাপিয়ে পড়েননি বরং এমন সময়গুলোতে তিনি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন।

১৯৮০ সালে বিল গেটস যখন সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তখন তিনিও সবার দ্বার প্রান্তে পৌঁছাতে চেয়েছেন। হতে চেয়েছেন নামুশের নির্ভরতা। তিনি তার স্বপ্ন ও সামর্থ্যের সাথে পরিকল্পনাকে প্রয়োজনমত বদলে ফেলতেন। আর তার এই তুখোড় কৌশলের মাধ্যমেই তিনি প্রথমবার ব্যর্থ হলেও পরেরবার ঠিকই সাফল্যের দেখা পেয়ে যেতেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ইলন মাস্কের জীবনে সফল হওয়ার কিছু কৌশল-

যে কোনো মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকুন
কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হবে। যে কোনো কাজে ঝুঁকি নিয়েই করতে হবে। ইলন মাস্ক যখন রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, কিংবা টেসলা নিয়ে কাজ করেছেন তখন তাকে অনেকেই নিরুত্‍সাহিত করেছে। কিন্তু তিনি কারো কথাই শোনেননি। একাই ঝুঁকি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ২০০২ সালের মধ্যে তিনি তার প্রথম দুটি উদ্যোগ অনলাইন সিটি গাইড জিপ-২ এবং অনলাইন পেমেন্ট সংস্থা পেপাল বিক্রি করে দেন। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩০। অর্থাত্‍ ব্যবসায়ে মোড় ঘোরালেন, ঝুঁকি নিলেন। বিক্রি করে তার ব্যাংকে এল ২০ কোটি ডলার। এর অর্ধেক নিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার পরিকল্পনা নিলেন তিনি। বাকি অর্ধেক রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা করলেন। এমনভাবেই সব সময় ভাগ্য নিয়ে খেলেছেন তিনি।

নিজের মনের কথা শুনুন
নিজের মন বোঝাই হলো সাফল্যের মূল চাবিকাঠি, এমনটাই ভাবেন এলন মাস্ক। মাস্ক বলেন,’আপনি যদি চান ভবিষ্যতে বিষয়গুলো আরও ভালো হোক, আপনি নতুন আকর্ষণীয় কিছু করুন, যা জীবনকে আরও উন্নত করে তোলে।’ মাস্কের জন্য এমনটা ছিল স্পেসএক্স। তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন কারণ তিনি মার্কিন স্পেস প্রোগ্রাম নিয়ে হতাশ ছিলেন। সেটি বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল না। মাস্ক বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা রেখেছিলাম যে আমরা পৃথিবী ছাড়িয়ে অগ্রসর হব, একজনকে মঙ্গল গ্রহে রাখব, চাঁদে বসতি গড়ব এবং কক্ষপথে খুব ঘন ঘন ঘুরব। যখন এটি হয়নি, তখন ‘মঙ্গল ওসিস মিশন’ ধারণা নিয়ে আসেন তিনি। এই মিশনে লাল গ্রহটিতে একটি ছোট গ্রিনহাউস পাঠানোর লক্ষ্য ছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে মহাকাশ নিয়ে উত্‍সাহিত করা, নাসার বাজেট বাড়ানো।

সমস্যাকে সমস্যা দিয়েই সমাধান করুন
ইলন খুবই পরিশ্রমী একজন মানুষ। টেসলার একজন প্রাক্তন প্রোডাকশন ম্যানেজার একবার বলেছিলেন যে, তাদের সপ্তাহে ৭০ ঘন্টা কাজ করা অস্বাভাবিক ছিল না। সেসময় তার মনে হতো টেসলা থেকে বরখাস্ত হওয়াটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত হবে। কাজের ক্ষেত্রে যতই সমস্যা এসেছে ইলন মাস্ক এভাবেই সমস্যাকে সমাধান করেছেন নতুন সমস্যা তৈরি করে। অর্থাত্‍ কোম্পানির সমস্যা মিটিয়েছেন দীর্ঘসময় কাজ করে।

পরিশ্রম করুন
পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। হোক সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক।একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারেন। এর একটি উদাহরণ এরই মধ্যে উপরের পয়েন্টে পেয়েছেন নিশ্চয়ই? তবে পরিশ্রম প্রসঙ্গে ইলন মাস্ক একবার বলেছিলেন, ‘কেউ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছে আর আপনি হয়তো ১০০ ঘণ্টা কাজ করছেন। আপনারা দুজন হয়তো একই কাজ করছেন। নিশ্চিত থাকুন, অন্য মানুষটি যেটা এক বছরে অর্জন করবে, সেটা আপনি মাত্র চার মাসেই অর্জন করতে পারবেন।’

সঠিকসময়ে সিদ্ধান্ত নিন
বেশিরভাগ মানুষই সঠিকসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ডক্টরাল ছাত্র অ্যাটিকাস পিটারসন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সঙ্গে একটি গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, গবেষণায় তারা দেখেছেন যে উদ্যোক্তারা ক্রমাগতভাবে ঝুঁকি নেন এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেন তারা বেশি সাফল্য অর্জন করেছেন। বিশেষ করে জটিল প্রকল্পগুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা অনেক বড় গুণ। ইলন মাস্ক সব কাজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে যে সব সময় সফল হয়েছেন তা নয়। কিন্তু থেমে যাননি। আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

ভয় পাবেন না
এলন মাস্কের পদচারণা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় সেক্টরগুলোতে। এতে খুব সহজেই বোঝা যায় তিনি কতটা সাহসী প্রকল্প বেছে নিয়েছেন। তিনি গাড়ি শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে চান, মঙ্গলে কলোনি বানাতে চান, ভ্যাকুয়াম টানেলে সুপার-ফাস্ট ট্রেন তৈরি করতে চান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও কাজ করছেন তিনি। সবই বড় বড় ভাবনা। বিশাল বাজেটের উদ্যোগ। তার সব প্রকল্প অনেকটা আশির দশকের গোড়ার দিকে কিশোর ফ্যান্টাসি ম্যাগাজিনে যেসব ধারণা থাকত তেমন। যেগুলো ভাবাই যায় না, কেউ কখনো করে দেখাতে পারবে। অবশ্য বাচ্চাদের বই থেকে যে তিনি এসব ধারণা পেয়েছেন, তা মাস্ক নিজেও বলেন।

সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ, মিডিয়াম ডটকম

Back to top button