সলমান খান (Salman Khan) এই মুহূর্তে রয়েছেন পনভেল ফার্ম হাউসে। জন্মদিনের প্রাক্কালে সাপের কামড় খেয়ে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বিশ্রামে রয়েছেন সলমান। তবে সাপটি বিষধর ছিল না বলে রক্ষা পেয়েছেন সলমান। 27 শে ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন আপাতত কাটছে পনভেল ফার্ম হাউসেই। তবে সলমান কোনোদিন অভিনেতা হতে চাননি।
একসময়ের হাই স্কুল লেভেলের চ্যাম্পিয়ন সুইমার সলমান চেয়েছিলেন বাবা সেলিম খান (Selim Khan)-এর মতো চিত্রনাট্যকার হতে। কিন্তু লিমকার অ্যাডে হঠাৎই এসে যায় সুযোগ। রোগা গড়নের হাসিখুশি ছেলেটিকে সকলের পছন্দ হয়েছিল। এরপর 1988 সালে ‘বিবি হো তো অ্যায়সি’ ফিল্মে চরিত্রাভিনেতা হিসাবে অভিনয় শুরু করেন সলমান। তখন বাংলার নায়ক প্রসেনজিৎ (Prosenjit Chatterjee)-র মতো সুন্দর ও দক্ষ অভিনেতাকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’-র চিত্রনাট্য। কিন্তু প্রসেনজিৎ এই ফিল্মের প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন। এরপর নতুন মুখ হিসাবে সলমানকে নেওয়া হয় এই ফিল্মে। সুপারহিট হয় ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’। কিন্তু তখনও অস্থিরচিত্ত সলমান চাইছেন চিত্রনাট্যকার হতে। অপরদিকে একের পর এক ফিল্মের অফার আসছে তাঁর ঝুলিতে। অভিনয় করছেন সলমান। কিন্তু চিত্রনাট্যকার হওয়ার স্বপ্ন তখনও অধরা। ইতিমধ্যেই তিনি প্রেমে পড়লেন সঙ্গীতা বিজলানি (Sangeeta Vijlani)-র।
সঙ্গীতার সঙ্গে সলমানের প্রেম ক্রমশ পৌঁছে গেল বিয়ের পরিণতির দিকে। বিয়ের কার্ড ছাপা হল, নিমন্ত্রণ সারা। হঠাৎই বিয়ের আগের দিন সঙ্গীতা সলমানের সঙ্গে ব্রেক-আপ করে দিলেন। কারণ তখন তিনি পড়েছেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন (Mohammed Azharuddin)-এর প্রেমে। পরিবারকেন্দ্রিক সলমান পরিবারের অসম্মানে ভেঙে পড়লেন, বেপরোয়া হয়ে উঠলেন। সলমানের ব্যক্তিত্বে এল পরিবর্তন। অপরদিকে সলমানকে বিয়ে করার জন্য সোমি আলি (Somi Ali) তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। একটি নাইটক্লাবে সলমান বিরক্ত হয়ে সোমির মাথায় আইসক্রিম ঢেলে দিয়েছিলেন। সোমি বুঝতে পেরেছিলেন, এখানে ডাল গলার নয়। তিনি ফিরে গেলেন নিউ ইয়র্ক। এরপরেই সলমানের জীবনে কৃষ্ণসার হরিণ শিকার ও ঐশ্বর্য রাই (Aishwarya Rai Bachchan)-এর সঙ্গে সম্পর্ক, দুটি বিতর্ক একসাথে ঘটল।
সলমানের মাধ্যমে ক্যাটরিনা বলিউডে কেরিয়ার তৈরি করতে সক্ষম হন। তাঁর ফিটনেস, হিন্দি শিক্ষা , সবকিছুতেই রয়েছে সলমানের অবদান। একসময় সলমান ও ক্যাটরিনার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। রণবীর কাপুর (Ranbir Kapoor)-এর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ধীরে ধীরে রণবীরের সঙ্গে ক্যাটরিনার সম্পর্ক তৈরি হয়। অপরদিকে সলমানের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছিলেন ক্যাটরিনা। কিন্তু সলমান এই সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। তিনি কেরিয়ারে মন দেন। ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা। সলমান নিজে কয়েকটি ফিল্মের চিত্রনাট্য লিখে ফেলেছেন। ওদিকে ধরা পড়েছে স্নায়ুর সমস্যা। এর ফলে তাঁর শরীরে মারাত্মক যন্ত্রণা শুরু হয়। এমনকি মুখ বেঁকে যেতে থাকে। চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন সলমান।
সুস্থ হয়ে আবারও কাজে যোগ দেন সলমান। অপরদিকে তাঁর সমাজসেবামূলক সংস্থা ‘বিইং হিউম্যান’ ক্রমশ বিস্তার করে চলেছে তার শাখা-প্রশাখা। সলমান যেখানে শুটিং করতে যান, সেখানে গরিব মানুষের জন্য বসে ‘বিইং হিউম্যান’-এর মেডিক্যাল ক্যাম্প। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা ও করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছিলেন সলমান। ঐশ্বর্য বিয়ে করেছেন অভিষেক বচ্চন (Abhishek Bachchan)-কে। তাঁদের বিয়েতে শুভকামনা জানিয়েছেন সলমান। মুখোমুখি হলে ঐশ্বর্যর সঙ্গে সৌজন্যমূলক ব্যবহার করেন তিনি। অপরদিকে ক্যাটরিনা বিয়ে করেছেন ভিকি কৌশল (Vicky Kaushal)-কে। কিন্তু সলমানের প্রযোজিত ফিল্ম থেকে তিনি বাদ পড়েননি। উপরন্তু তাঁদের বিয়েতে সলমান উপহার দিয়েছেন তিন কোটি টাকার বিলাসবহুল গাড়ি।
কিন্তু সলমান নিজে বিয়ে করতে রাজি নন। ইউলিয়া ভন্তুর (Yulia Vantour)-এর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন রটলেও খান পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, সলমান ও ইউলিয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা শুধুই বন্ধু। নতুন করে সলমান সম্পর্কে জড়াতে চান না। বিয়ে করতেও ইচ্ছা নেই তাঁর। সম্পর্কের বিশ্বাসঘাতকতা বড্ড কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। বিয়ে করলেও তিনি জানেন, নিজের সন্তানের বড় হয়ে ওঠার সাক্ষী থাকতে পারবেন না তিনি। তার আগেই তাঁকে চলে যেতে হবে এই পৃথিবী ছেড়ে। একটি সাক্ষাৎকারে নিজেই এই কথা জানিয়েছেন সলমান। সুতরাং তিনি নিজের কেরিয়ার ও সমাজসেবামূলক কাজ নিয়েই থাকতে চান। আজও যখন তিনি কোনো মহিলাকে সাহায্য করেন, তাঁকে শুনতে হয়, বিনিময়ে তিনি ওই মহিলার ইজ্জত নিয়েছেন। কিন্তু ‘মিটু’ বিতর্কে ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবশালীদের নাম জড়ালেও সলমানের নাম সেই তালিকায় ছিল না। তাঁর জীবনে একাধিক প্রেম আসতে পারে, কিন্তু কোনো নারীকে সলমানের সাহায্য করার অর্থ তাঁকে নিজের শয্যাসঙ্গিনী করা নয়। বারবার সলমানের দিকে আঙুল না তুলে যাঁরা সমাজে মহিলাদের মর্যাদাহানি করেন, যাঁরা সত্যিই অপরাধী, তাঁদের শাস্তি চাইলে ভালো হয়। তাহলে আর কোনো নির্ভয়া হবে না, হবে না কোনো কামদুনি, হবে না হাথরস। এত কিছু লেখার পরেও বিতর্ক চলতেই থাকবে। কিন্তু তাতে থেমে যাবে না সলমানের সঠিক কর্মকান্ড। সুপারস্টার সলমান খানের জন্মদিনে ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর তরফ থেকে তাঁর প্রতি রইল অনেক শুভেচ্ছা।